দীর্ঘ একমাস সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীতে আটকে থাকার পর গন্তব্যে ফেরার সুযোগ পেলো শত-শত নৌযান। পানি কমে যাওয়ায় গত একমাস যাবত ৫ পাটলাই নদীর এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়লা-চুনাপাথর বোঝাই এসব নৌযান আটকে পড়ে। এসময়ের মধ্যে শত শত শ্রমিককে যেমন কর্মহীন হয়ে পড়তে হয়েছে, তেমনি লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের তিনটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে এলসি করা কয়লা, চুনাপাথর বোঝাই ভলগেট নৌকা পাটলাই নদী হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পণ্য নিয়ে যায়। বছরের অন্যসময় এ পথে নৌচলাচল স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে পাটলাই নদীর কিছু অংশের পানি কমে যায়। তখন দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সুলেমানপুর বাজারসংলগ্ন এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌজটের সৃষ্টি হয়।
এ কারণে কয়লা-চুনাপাথর বোঝাই কয়েক হাজার নৌকা একমাস ধরে নদীতে আটকা পড়ে। এতে কয়লা-চুনাপাথরসহ কয়েকশ কোটি টাকার পণ্য আটকে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকায় সময়মতো পণ্য পৌঁছে দিতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক দিন নদীর পানি বাড়তে থাকায় দীর্ঘ নৌজট থেকে মুক্তি মিলেছে।
নৌশ্রমিক আজাদ মিয়া বলেন, ‘একমাস আটকে থাকার পর নদীতে পানি বাড়ায় নৌজট থেকে মুক্তি মিলেছে। অনেক কষ্ট করেছি এই এক মাস। খাওয়ার জন্য ভালো পানি পাইনি। নদীর পানিকে ফুটিয়ে খেতে হয়েছে।’
লিটন মিয়া নামে আরেক নৌশ্রমিক বলেন, ‘একই জায়গায় দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে থেকেছি। প্রতিবছর আমাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই,প্রতি বছর যেন আমাদের এই সমস্যায় পড়তে না হয়।’
নৌশ্রমিক কাজল মিয়া বলেন, ‘নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেলাম। প্রতিবছর আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, পাটলাই নদীখননের জন্য। কিন্তু এই নদীটা খনন করা হয় না। যে কারণে আমাদের শ্রমিকদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়।’
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘প্রতি বছর পাটলাই নদীতে নৌজট সৃষ্টি হয়। যে কারণে একমাসের মতো শ্রমিকদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যা যেন প্রতিবছর সৃষ্টি না হয়, সে জন্য কাজ করছি। এখন আর নৌজট নেই। কারণ নদীতে পানি বেড়েছে।’
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ‘পাটলাই নদীর পানি কমে গেলে প্রতিবছর নৌজট সৃষ্টি হয়। এই জায়গায় খননকাজ চলছে। খনন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/