২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



আমাদের ফুটবল কোথায়

রেজাউল করিম || ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:১২ এএম
আমাদের ফুটবল কোথায়


ফিফা বিশ্বকাপ আসরে পুরো বিশ্ব আজ মেতে উঠেছে। পায়ে পায়ে চলছে ফুটবল যুদ্ধ। ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে থেকে এই যুদ্ধ শুরু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে স্থগিত ছিল ফুটবল বিশ্বকাপ । ২০০২ সালে কোরিয়া-জাপান যৌথভাবে এশিয়ায় প্রথম বিশ্বকাপের আসর বসায়। এবার এশিয়ার কাতারে দ্বিতীয়বারের মতো আসর বসেছে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে কাতারের দিকে। 

২০২৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ আয়োজনে। সেই বিশ্বকাপে অংশ নেবে ৪৮টি দেশ। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ক্রমশ বাড়ছে খেলায় অংশগ্রহণ। ফুটবল কতটা জনপ্রিয় বিশ্বকাপ আসলে আঁচ করা যায়। ফুটবল খেলা উপভোগে বাংলাদেশে কমতি নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলছে ৩২টি দেশ। এত দেশের ফুটবলের মাঝে আমাদের ফুটবল কোথায়? 

বিদেশিদের ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশে বিশ্বকাপ উৎসব। দেশের ৮০ শতাংশ ফুটবলপ্রেমী নিজেদের দুভাগে বিভক্ত করেছে। কেউ আর্জেন্টিনা। কেউ ব্রাজিল। বাকি ২০ শতাংশ বাংলাদেশি দর্শক অন্য ৩০ দলের সাপোর্টার। 

বিদেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে মেতে উঠেছি আমরা। অথচ ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান কী, এ নিয়ে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ সময়টা গেছে ২০১৭, ২০১৮ সাল। বহুদিন আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলতে না পেরে র‌্যাংকিয়ে পিছিয়ে ১৯৭তম হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল মাত্র ৯টি দল। নিয়মিত খেলা শুরু হতেই সে অবস্থা কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে ১৮২-তেও উঠে এসেছিল। কিন্তু ২০২২ সালে আবার হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে তুর্কমেনিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায়। 

এই হারে আবার র‌্যাংকিংয়ে ১৯০-এর পেছনে চলে যায় । র‌্যাংকিংয়ে ১৮৬তম অবস্থান নিয়ে বছর শুরু করলেও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের আগে তিনটি প্রীতি ম্যাচে কোনো জয় পায়নি, হেরেছে মালদ্বীপের বিপক্ষেও। প্রথম ম্যাচে ৯৯ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনের বিপক্ষে খেলছিল বাংলাদেশ। এত এগিয়ে থাকা এক দলের বিপক্ষে ২-০ গোলের হারে রেটিং পয়েন্ট ৫.০১ কমেছিল বাংলাদেশের। র‌্যাংকিংয়ে অবস্থানও একধাপ পিছিয়ে গিয়েছিল। এদিকে বাংলাদেশকে হারিয়ে ৪ ধাপ এগিয়েছে বাহরাইন। বর্তমানে র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম। আর মিয়ানমার এত ঝামেলা নিয়েও আমাদের থেকে এগিয়ে। এমনকি সাফের বাকি সব দেশও এগিয়ে যাচ্ছে, পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি র‌্যাংকিংয়ের যে দল বিশ্বকাপ খেলছে, সেটি হলো ঘানা। তাদের র‌্যাংকিং ৬১, আর আমাদের ১৯২।

বাংলাদেশের মানুষের মনে জায়গায় রয়েছে ফুটবল। সেটা বিশ্বকাপ ফুটবলের এলই প্রমাণ মেলে। কিন্তু এই জনপ্রিয় খেলা নিয়ে বাফুফের কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেই এটা উত্তাপের বিষয়। 

বাংলাদেশের ক্রিকেট এক সময় বর্তমান অবস্থানে ছিল না। পরিচর্যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ক্রিকেট অনেকটাই পরিচিত নাম। বিশ্বে দেশকেও পরিচিত করেছে । পরিচর্যা করলে ফুটবলকেও একটি সম্মানজনক স্থানে নেওয়া যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত পদক্ষেপ। ব্রাজিলে ছিলেন পেলে এখন আছেন নেইমার, আর্জেন্টিনায় ছিলেন ম্যারাডোনা এখন মেসি, ফ্রান্সে মিশেল প্লাতিনি, জার্মানিতে বেকেনবাওয়ার, পুর্তগালে আছেন রোনালদো. পোল্যান্ডে রয়েছে লেভান্ডভস্কি, ইংল্যান্ডে আছে ডেভিড ব্যাকহাম। বাংলাদেশেও তেমননি ছিলেন সালাউদ্দিন। অযত্নের দেশে নতুন কোন সালাউদ্দিন তৈরি হচ্ছে না। টানা চতুর্থ মেয়াদে কাজী সালাউদ্দিন ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বে আছেন। কিন্তু ফুটবলের কোন উন্নতি নেই। গত ২০ বছরের পারফরমেন্স হিসেব করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ ভারতকে কখনওই ফিফা র‌্যাংকিংয়ে পেছনে ফেলতে পারেনি। কিন্তু ব্যবধান ছিল কম। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৩০তম স্থানে, ভারতের অবস্থান ছিল ১০৬। অথচ বর্তমানে ভারত ১০৪ এ নেমেছে। বাংলাদেশের অবস্থান বেড়ে ১৯২। বিভিন্ন টেকনিক শেখানো, দম বাড়ানোর উপায় শেখানো এবং দেশপ্রেমসহ মনস্তাত্ত্বিক শক্তি বাড়ানো নিয়ে কোনো চোখে পড়ছে না। দম বাড়ানোর জন্য আফ্রিকানদের, টেকনিক শেখানোর জন্য ইতালি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও হল্যান্ডকে ফলো করা যেতে পারে।

এখানে ফুটবলারদের সদিচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতাও দরকার। ফেডারেশন আর ক্লাব যার যার জায়গা থেকে নিজেদের কাজটা করলেও কেউ বড় খেলোয়াড় হতে পারবেন না, যতক্ষণ না তিনি বড় ফুটবলার হতে চান। রোনালদো, মেসি-নেইমারের দিকে তাকিয়ে দেখুন, কী হাড়ভাঙা পরিশ্রমই না করেন তারা। 

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিজেদের অবস্থান জোরদার করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পেশাদার ফুটবলাররা। এসব দেশে তৃণমূল থেকে ফুটবলার তুলে আনছে। যা দেশের ক্রিকেটে অনেকটা করা হচ্ছে। তাদের রয়েছে বয়সভিত্তিক দল থেকে পেশাদার দল নিয়ে নানা পর্যায়ের ফুটবল একাডেমি। এরা বিভিন্ন পর্যায়ে ফুটবল খেলে এবং যারা ভালো পারফরম করে, তারা কেন্দ্রের নজরে আসে। আগে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল লিগ হতো। 

ঘরোয়া লিগে সেই জমজমাট ভাবটা এখন নেই। ফলে খেলোয়াড়দের অভাব। সংগঠকেরও অভাব। ঘরোয়া লিগ আয়োজন হলেও পর্যাপ্ত ফুটবল মাঠ নেই। ফলে দেশে ফুটবল পিছিয়ে পড়ছে। প্রতিটা ক্লাবে বা মফস্বলে মাঠ না থাকায় পেশাদার ফুটবল তৈরি হচ্ছে না। মাঠে চর্চা হবে, লিগ হবে। কিন্তু দেশে এটা হচ্ছে না। ফুটবল রাজত্বে সারাবছর ধরেই চলে ফুটবল। নানা পর্যায়ে প্রতিযোগিতা। একজন পেশাদারীত্বের ক্ষেত্রে এটি একটি নেতিবাচক প্রভাব রাখে। খেলোয়াড়দের অনেকেই ফুটবলের বাইরে বিকল্প আয়ের নজর দেন, কারণ তারা নিশ্চিত থাকেন না যে লিগ শেষ পর্যন্ত হবেই, কিংবা হলেও ক্লাবগুলো যথাযথ বিনিয়োগ করবে কি না। কিন্তু সেখানে পুরো বছরজুড়েই ফুটবল মাঠে থাকে।

দলীয় খেলা ফুটবল। এখানে উন্নতির জন্যও দরকার সমন্বিত চেষ্টা। ফেডারেশন চেষ্টা করলেই একজনকে মেসি-নেইমার তৈরি করতে পারে না। আবার ক্লাব না দেখলেও মেসি-নেইমার তৈরি হবে না। এখানে ফুটবলারদের সদিচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতাও দরকার। ফেডারেশন আর ক্লাব যার যার জায়গা থেকে নিজেদের কাজটা করলেও কেউ বড় খেলোয়াড় হতে পারবেন না, যতক্ষণ না তিনি বড় ফুটবলার হতে চান। রোনালদো, মেসি-নেইমারের দিকে তাকিয়ে দেখুন, কী হাড়ভাঙা পরিশ্রমই না করেন তারা। 

বাফুফেকে বয়সভিত্তিক দলের জন্য ভালো কোচিং স্টাফ রাখা প্রয়োজন। রেফারিং ভালো করতে হবে। বিশ্বকাপে রেফারিং দেখলেই বোঝা যায়, আমরা কোথায় এখন। বড় দলগুলো রেফারির সহায়তা পায়। কিন্তু এরা একই কাজ যখন ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে করে, মাপ পায় না। ক্লাবগুলোকে প্রফেশনাল করতে হবে। নিজেদের মাঠ না থাকলে কোনো নির্দিষ্ট মাঠ লিজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মাঠের পরিচর্যা করতে হবে। দেশের মাঠগুলোর কোনোটাই মানসম্মত না। বর্ষার সময়ে কর্দমাক্ত, শুকনো মৌসুমে জায়গায় জায়গায় ঘাস। পেশাদার ফুটবলারদের দেশেন এমন মাঠের কথা ভাবাই যায় না। মাঠ নিয়ে ওরা অনেক সচেতন, তখন আমাদের বোঝা উচিত দিনের পর দিন একই মাঠে খেলা হলে, সে মাঠটা ভালো থাকে না।

বাফুফে ক্যালেন্ডার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ বাফুফেকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ক্লাবের নিজস্ব একাডেমি থাকতে হবে। কোচকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সব খেলোয়াড়ের জন্য একটা ডেইলি ফিটনেস রুটিন করা, আর তাদের ফুড চার্ট দিতে হবে। ক্লাবে কিংবা বাসায় বাধ্যতামূলকভাবে সেটা মানতে হবে। যেসব ক্লাবে জিম করার সুবিধা আছে, প্রয়োজনে সেসব জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্যও কাজে লাগানো যেতে পারে। যেখানে একজন স্থানীয় ট্রেনার খেলোয়াড়দের দেখাশোনা করবে। স্কিলের সঙ্গে শারীরিক আর মানসিক দুটোরই সংযোগ দরকার। আমাদের লিগে খেলা অনেক কম। তাই জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু হলে খেলোয়াড়দের সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়। এটা মাথায় রেখে বাফুফের উচিত সবসময় মাঠে খেলা রাখা। সব দলের নিজস্ব মাঠ লাগবে, লাগবে জুনিয়র দল। 

সম্প্রতি ‘সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২২’-এ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ফাইনালে শক্তিশালী নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তাই পরিকল্পনামাফিক চলছে জাতীয় দলও গড়া সম্ভব।  

খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন দিয়ে প্রফেশনাল লেভেলে নিতে হবে। কিছু খেলোয়াড়ের পেছনে অস্বাভাবিক চুক্তি না করে সেই টাকা ফুটবল উন্নয়নে আর প্রফেশনালিজমে ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশ্বকাপে জার্সি বিক্রিতে কতটা আয় হয়? এই পুরো মার্কেটটাই দখল করা সম্ভব, যদি প্ল্যান করা যায়। আর জুনিয়র দল তৈরির সঙ্গে সঙ্গে স্কাউটিং চালু করতে হবে। 

বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে সাংবাদিকতা অনেক পিছিয়ে। ফুটবল নিয়ে রিপোর্টিং মানে শুধু ম্যাচ রিপোর্ট নয়। সাপ্তাহিক অ্যানালাইসিস, ম্যাচ ডে অ্যানালাইসিস, অনেক কিছুই আছে। আমরা সেখানে বেশ পিছিয়ে। পত্রিকার পাতায় থাকে বিদেশি খেলোয়াড়দের বিশাল ছবি। এনালাইসিস স্টোরি। আমাদের ফুটবল অনেক পিছিয়ে। সাফেও আমরা ৪ নম্বরে। ঘরোয়া লিগ নিয়মিত দেখানো ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার দায়িত্ব। বোর্ড-ক্লাবের প্রতি প্রেশার ক্রিয়েট করতে হবে । জবাবদিহি না থাকায় টানা ক্ষমতায় থেকেও ফুটবল শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে। ৪৫টি দেশের মধ্যে এশিয়ায় আমাদের অবস্থান ৪১। ২০২৭-এর এশিয়া কাপ লক্ষ করে যদি এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি, নিজেদের ওপর আস্থা রাখি, এগোনো কি খুব কঠিন ৪১-কে ২৪টা দেশের মধ্যে আনা? বাফুফে, ক্লাব সবাই যদি চেষ্টা করে দিনবদলের সূচনা আগামী বিশ্বকাপ থেকে কেন করা সম্ভব নয়?

আধুনিক ফুটবল জ্ঞান নিয়ে বেড়ে ওঠার মাধ্যম তৈরি করতে হবে। দেশে একটা সাধারণ মানের একাডেমি গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। দু'বার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পরিকল্পনা না থাকায় দুটোই বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে অনেক জাঁকজমকভাবে সিলেট বিকেএসপিকে ২০১১ সালে একাডেমি হিসেবে চালু করে বাফুফে। অথচ টাকার অভাব দেখিয়ে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ফর্টিজ গ্রুপের সহযোগিতায় ঢাকার বেরাইদে দ্বিতীয় দফায় একটি একাডেমি করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। 

ফুটবল লিগ কমে যাওয়ায় ৭০ থেকে ৮০টি ক্লাবের প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার ক্ষুদে ফুটবলার, যারা ধাপে ধাপে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসত। মফস্বলেও ফুটবল লিগের অবস্থাও ভালো না। স্পন্সর থাকার পরও ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে সর্বাধিক ৪৫টি জেলায় হয়েছিল ফুটবল লিগ। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশের কোনো জেলাতেই ফুটবল লিগ হয়নি। ২০১৮ সালে বাফুফের অর্থায়নে ৫২টি জেলায় ফুটবল লিগ হয়েছিল। বর্তমানে ফুটবল লিগ চোখে পড়ে না। দেশের ফুটবলে বড় সমস্যা কোচ। ফুটবল কোচের চাকরি সবসময়ই অনিশ্চয়তায় থাকে।  

বাংলাদেশের মতো অনিশ্চয়তা পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। এখন পর্যন্ত ৪৮ জন কোচ বদল করেছে ফুটবল ফেডারেশন। আর কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের ১৩ বছরের শাসনামলে ২০ জন কোচ পরিবর্তন করেছে বাফুফে। এরমধ্যে সবচেয়ে ভাগ্যবান ইংল্যান্ডের জেমি ডে। ২০১৮  সাল থেকে  তিন বছরের বেশি সময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ভালো খেলোয়াড় তৈরির জন্য ভালো মানের কোচ ও ভালো মাঠের প্রয়োজন।

আধুনিক সভ্যতার একটি অঙ্গ হলো খেলাধুলা। মানুষের বিভিন্ন সৃজনশীলতার মধ্যে এটি একটি। শরীরকে সুস্থ রাখা এবং আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম খেলাধুলা। এর মধ্যে ফুটবলও পড়ে। ফুটবল মানে একটাই মাঠ। সবার জন্য সমান। একটাই বল। সবার জন্য সমান। খেলোয়াড়দের মধ্যে পার্থক্য করে দেয় শুধু পরিশ্রম আর প্রতিভা। ফুটবল এমন একটা সহজ সাধারণ কাঠামো, যেখানে জাতি-ধর্ম-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাইকে স্বাগত জানানো হয়। তাই ফুটবল সারাবিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা। এই বাংলাদেশে ফুটবল খেলা চলছে প্রায় একশ বছর ধরে। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মাঠে আমাদের ফুটবলের কোনো অবস্থান নেই।

প্রতিযোগিতার যুগে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন অত্যন্ত কঠিন। আমাদের জাতীয় ফুটবলে খেলোয়াড়, অনুশীলন, আস্থা, উদ্যম, ব্যবস্থাপনা, সংগঠক, পরিচালক, প্রশিক্ষণ বাড়িয়ে একটা অবস্থানে নেওয়া সময়ের দাবি। এত বছরে ফুটবলও আজ পর্যন্ত ব্যর্থতা আর পরাজয়ের গ্লানি ছাড়া অন্য কিছুই দিতে পারেনি। বিশ্বকাপ আসর নিয়ে মেতে আছি। অথচ আমাদের ফুটবল কোথায়? তবুও আমরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। 

সম্প্রতি ‘সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২২’-এ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ফাইনালে শক্তিশালী নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তাই পরিকল্পনামাফিক চলছে জাতীয় দলও গড়া সম্ভব।  

লেখক: সংবাদকর্মী



আরো পড়ুন