২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



কলাগাছের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালো শিশুরা

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা || ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম
কলাগাছের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালো শিশুরা


মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে শিশুরা। তারা নিজ হাতেই গড়েছে এই শহীদ মিনার, তারপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। কেউ বাড়ির গাছের ফুল দিয়ে, কেউ বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফুল কিনে এনে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে কোমলমতি শিশুদের শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।

শিশুরা জানায়, অভিভাবক এবং বই পড়ে শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য জেনে তারা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারপর কলাগাছ কেটে ও কঞ্চি এবং মাটি দিয়ে বাড়ির আঙিনায় অস্থায়ী শহিদ মিনার করে শ্রদ্ধা জানায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাগমারা, এনায়েতপুর, পিচুরিয়া, ধরেরবাড়ী, বানিয়াবাড়ী, কোনাবাড়ী, চিলাবাড়ীসহ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিশুরা বাড়ির উঠানে মাটি দিয়ে উঁচু করে কলাগাছ পুঁতে শহীদ মিনার বানিয়েছে। শিশুরা তাতে বাঁশের কঞ্চি ও রঙিন কাগজ লাগিয়ে সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।

প্রতিটি মিনারের ওপর অপেক্ষাকৃত ছোট কলাগাছের আরও তিনটি টুকরা তির্যকভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে। রঙিন কাগজ ও নানা রঙের ফুল দিয়ে প্রতিটি মিনার মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চারপাশে সুতা টানিয়ে তাতে রঙিন কাগজ ও বেলুন দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। শহীদ বেদীতে বুনোফুল, গাঁদা ও গোলাপফুল শোভা পাচ্ছে। পাশেই সাউন্ড সিস্টেমে দেশাত্মবোধক গান বাজছে। কোথাও কোথাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ভোজের আয়োজনও করেছে শিশুরা।

শিক্ষার্থী তাওহীদ মিয়া বলে, ‘বাবা, মা ও স্কুলের বড় ভাই এবং টিভি দেখে ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে জেনেছি। কিভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয় সেটাও আমাদের জানা থাকায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’


অপর শিক্ষার্থী কবির হোসেন বলে, ‘ভাষার মাস শুরু হলেই আমরা পরিকল্পনা শুরু করি, কিভাবে শহীদ মিনার বানাবো, কোথায় ফুল পাবো, কে কে আমাদের কাজে সহযোগিতা করবে। শহীদ দিবসের আগের দিন থেকে আমরা কাজ শুরু করি। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের ছেলে মেয়েরা মিলে মিশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।’

শিক্ষার্থী শরিফ মিয়া বলে, ‘আমাদের মধ্যে কেউ নিজের বাড়ির ফুল আবার অনেকেই বাবাকে দিয়ে শহর থেকে ফুল কিনে এনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভালোই লাগছে।’

সুমা আক্তার বলে, ‘আমি জানতে পেরেছি বাংলা ভাষার জন্য রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের সম্মানে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।’

শহিদুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলের বায়নার পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছর যাবত শহীদ দিবসের আগের দিন শহর থেকে ফুল কিনে আনি। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আমার ছেলে কলা গাছের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এতে আমি মনে করি শিশুকাল থেকে তার ভাষা শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা ও দেশ প্রেম বৃদ্ধি পাবে।’

শিক্ষক তন্ময় হাসান বলেন, ‘গ্রামে কোনো স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় সকালে শিশুরা নিজেদের তৈরি কলা গাছের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। গ্রামে যে ফুল পাওয়া যায়, সেই ফুল দিয়েই শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আবার অনেকেই শহর থেকে ফুল আনিয়েছে।’


সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সহ-সভাপতি বাদল মাহমুদ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো দিক। অন্ততপক্ষে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা বুঝতে পারছে ২১ ফেব্রুয়ারিতে একটা কিছু হইছে। সেজন্য গ্রামের কোমলমতি শিশুরা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো দিক।’

সদর উপজেলার ছোট বাসাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘শিশুরা বড়দের কাছ থেকে প্রতিটি বিষয় শেখার চেষ্টা করে। শহীদ মিনার বানিয়ে শিশুদের শ্রদ্ধা নিবেদন আসলেই একটি ভালো দিক। এরফলে বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানার সুযোগ পাবে।’

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, ‘গ্রামে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় শিশুরা অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে যেভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে, সেটি আসলেই ভালো উদ্যোগ। পড়াশুনার মাধ্যমে তারা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবে। এতে করে তাদের মধ্যে দেশের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’

নোমান/এম



আরো পড়ুন