২১ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার



লাইফ স্টাইল
প্রিন্ট

ঘাড়ে ব্যথা হয় কেন?

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০৪:১০ পিএম
ঘাড়ে ব্যথা হয় কেন?


বিভিন্ন কারণেই আমাদের ঘাড়ে ব্যথা হয়ে থাকে। এ সমস্যায় ভোগেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। অনেকেই কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ঘাড় গুঁজে দিয়ে দিন পার করে থাকেন। এ থেকেও ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে। মেরদণ্ডের ওপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝের ডিস্ক, পেশি ও লিগামেন্ট নিয়ে গঠিত হয় ঘাড়।

মেডিকেলের ভাষায় মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশকে বলা হয় সারভাইক্যাল স্পাইন। স্থিরঅঙ্গভঙ্গির জন্য অধিকাংশ মানুষের কাঁধ বা ঘাড়ে হঠাৎ করেই তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে ঘাড়ে ব্যথা হয়। সম্প্রতি ঘাড়ে ব্যথা ও এর প্রতিকার নিয়ে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট এম ইয়াছিন আলী। এবার তাহলে এ বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।

ঘাড় ব্যথার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ: সারভাইক্যাল স্পনডিইলোসিস, সারভাইক্যাল স্পনডিইলিসথেসিস, সারভাইক্যাল রিবস, সারভাইক্যাল ক্যানাল সরু হওয়া স্পাইনাল ক্যানেল স্টেনোসিস, সারভাইক্যাল ডিস্কা প্রলেপস বা হারনিয়েশন, মাংসপেশি, জোড়া, হাড়, লিগামেন্ট ও স্নায়ুর ইনজুরি বা রোগ, অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘুমানো বা ঘুম না হওয়া, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ, হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ ক্ষয় হওয়া, হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া, সারভাইক্যাল অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ফাইব্রোমায়ালজিয়া; পাশে কাত হয়ে বা সামনে ঝুঁকে ভারী কিছু তোলার চেষ্টা, হাড়ের সংক্রমণ, ডিস্কের প্রদাহ, কম্পিউটারে কাজ করা, চেয়ার বসে পড়ালেখার সময় ঘাড় ও মাথার অবস্থান ঠিক না হওয়া বা উপুর হয়ে শুয়ে পড়ালেখা, ড্রাইভিংয়ের সময় মাথা ও ঘাড় সঠিকভাবে না থাকা, পেট ও বুকের মাঝখানের বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যা (পিত্তথলির পাথর, ডায়াফ্রাম ইরিটেশন ইত্যাদি), হাড় ও স্নায়ুর টিউমার সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।

ঘাড় ব্যথার উপসর্গ: কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে ঘাড়ের ব্যথা। এসব অঙ্গ অস্বাভাবিক অনুভূতিও হতে পারে কিংবা অবশভাব মনে হতে পারে। ঘাড় জমে থাকা অনুভব হওয়া, ঘাড়ের নড়াচড়া ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করা, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলা বা বেশি কাজের পর তীব্র ব্যথা হয়। আবার হাঁচি-কাশিতে বা সামনে ঝুঁকে থাকলেও ঘাড় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। মাথার পেছন থেকে শুরু করে সামনেও ব্যথা হতে পারে। ব্যথার কারণে ঘুমও ভেঙে যেতে পারে। সঙ্গে ঘাম, জ্বর, শীত বা শরীর কাঁপানোর মতো সমস্যাও হতে পারে।

ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা: ঘাড় ব্যথায় দুই ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। প্রথমত, কনজারভেটিভ চিকিৎসা ও দ্বিতীয় সার্জিক্যাল চিকিৎসা।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, ২. ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপিতে নানা ধরনের ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করানো হয়। অনেক সময় দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকেও চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হয়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: ঘাড়ের ব্যথা যদি স্বাভাবিক চিকিৎসায় ঠিক না হয়, তাহলে ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ুর সমস্যা হলে, বাহু, হাত ও আঙুলে ক্রমশ দুর্বলতা বা অবশভাব হলে বা প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সার্জিক্রাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

ঘাড় ব্যথায় প্রতিরোধ: কখনোই সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘ সময় কাজ করা যাবে না। মাথার ওপর ওজন নেয়া যাবে না। শক্ত বিছানায় ঘুমাতে হবে। বালিশ হতে হবে মধ্যম আকারের। যার অর্থেক মাথা ও বাকি অর্ধেক ঘাড়ের নিচে রাখতে হবে। ব্যথা যদি কখনো তীব্র হয় তাহলে ঘাড় উঁচু-নিচু করা বা মোচড়ানো (টুইস্টিং) যাবে না। সেলুনে ঘাড় মটকানো যাবে না, কাত হয়ে শুয়ে পড়ালেখা, টেলিভিশন বা মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা, কম্পিউটারের মনিটর সবসময় চোখের লেভেল বরাবর রাখা, ব্যথা হলে গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে সেঁক নেয়া এবং ভ্রমণের সময় সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া কখনো সমস্যা তীব্র মনে হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।



আরো পড়ুন