২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



দুর্বল ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে আর সহায়তা দেওয়া হবে না: গভর্নর

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ২০ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
দুর্বল ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে আর সহায়তা দেওয়া হবে না: গভর্নর


দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোকে আর সহায়তা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, হঠাৎ করে ব্যাংক বন্ধ করে কিংবা ব্যাংকের জন্য টাকা ছাপিয়ে কোনো সমাধানের পথে যাওয়া যাবে না। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর জানান, এক হাজার টাকার নোট বাতিলের কোনো পরিকল্পনা তাঁদের নেই। ফলে এটা নিয়ে যেন গুজব ছড়ানো না হয়। তবে দুর্বল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভাঙার বিষয়টি তাঁদের বিবেচনায় রয়েছে।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর দুর্বল পরিস্থিতি ও চলমান অস্থিরতা নিয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। এসব ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ভাবছে, তা জানতে চান তাঁরা। জবাবে গভর্নর বলেন, এত দিন যা হওয়ার, তা হয়েছে। এখন ওই ব্যাংকগুলোকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া আলাদা হবে। তবে ব্যাংকগুলো থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যেন আর টাকা সরাতে না পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং কমিশন গঠন হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংখ্যা কমিয়ে বা তাদের একীভূত করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ বা টাকা ছাপিয়ে তা সমাধান করা হবে না।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকেরা আমানত তুলে নিচ্ছেন, জানিয়ে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকেরা। এ প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমানত তুলে নেওয়া আমানতকারীর সার্বভৌম অধিকার। আমানতকারীরা নিরাপদ বোধ না করলে তাঁরা টাকা তুলে নেবেন। সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করবে না। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার ওপর আমানতকারীদের আস্থা না থাকলে সেই ব্যাংক চলতে পারে না। সব সময় এমন ব্যাংককে উদ্ধার করতে যাওয়া ঠিক নয়। এই পরিস্থিতির জন্য ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষই দায়ী; তারা নিজ দায়িত্বে এ অবস্থায় নিয়ে গেছে। ফলে আমরা তাদের এখন কোনো সহায়তা দেব না।’

বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিং খাত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থানও জানতে চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ বিষয়ে যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, এ জন্য আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) একটু সময় নিচ্ছি। তাড়াহুড়ো করে জনপ্রিয় হওয়ার মতো কিছু করছি না।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা যেটাই করি না কেন, যাঁরা দোষী, তাঁদের ধরা হবে। কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে না। এটার নিশ্চয়তা আমরা ব্যবসায়ীদের দিয়েছি। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দায়ী থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাও দায়ী থাকলে দেখা হবে।’

দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা আসবে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকগুলোর সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য আমরা কাজ করছি। ব্যাংকে ঘটা ঘটনাগুলো কাদের দ্বারা হয়েছে, কত পরিমাণে হয়েছে; সেগুলো হিসাব না করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। হয়তো দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা একটা ঘোষণাতে যেতে পারব। তারপর এর কর্মপরিধি ঠিক করে প্রতিটি দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংককে চিহ্নিত করে আলাদাভাবে এগোনো হবে। শুরুতে বড় ব্যাংকগুলো নিয়ে কাজ করা হবে। কারণ, তারাই পদ্ধতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক। বর্তমানে যেহেতু অস্থিরতা চলছে, ফলে যে সমাধানই নিই না কেন, সেটা বিতর্ক ছাড়া হবে না।’



আরো পড়ুন