২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



৩২ নম্বরে বিবস্ত্র করা থেকে গায়ে হাত তোলার ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন: সারজিস

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ১৬ আগস্ট, ২০২৪, ০৭:৩৮ এএম
৩২ নম্বরে বিবস্ত্র করা থেকে গায়ে হাত তোলার ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন: সারজিস


ধানমন্ডি ৩২-সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে  যে-সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো ছাত্র-জনতের  গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন,  ‘১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে বিবস্ত্র করা থেকে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছেন, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন।   শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে  সারজিস আলম বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো কর্তৃপক্ষ নয়, বরং একটি প্রেসার গ্রুপ৷’

সারজিস আলম বলেন, ‘ভাইরাল ভিডিওতে দেখেছি যে আমার বাবার বয়সী একজনকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে, আমার বাবার বয়সী একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে ও লোকজন যাচ্ছেতাই বলেছে, অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে, আমার মায়ের বয়সী একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। সাংবাদিক ভাইবোনদের ওপর হামলার বিভিন্ন ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি৷ এমন অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে৷’

এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘গত ১৬ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, কথা বলার অধিকার হরণ, দুর্নীতি-নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে—এগুলোর বিরুদ্ধেই ছিল আমাদের অভ্যুত্থান। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চেয়েছি, যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, মতপ্রকাশ করতে পারবে, যে যে ধারায় বিশ্বাসী, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। এই স্বাধীনতাগুলো থাকবে৷ গতকাল আমরা এমন বেশ কিছু চিত্র দেখেছি, যে জায়গাগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল৷ আমরা জানি না, ওই শিক্ষার্থীরা কোন মতাদর্শ ধারণ করে, তাদের ডিফাইনও করতে পারবো না৷’

বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনা করেছেন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলছি, আমরা খুঁজছি যে এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক যুক্ত আছেন কি না৷ আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুরো বাংলাদেশে এসব ঘটনার সঙ্গে একজন সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়কের যুক্ততা পাওয়া গেলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের টিম থেকে বহিষ্কার করবো৷ মানুষকে বিবস্ত্র করা থেকে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছে, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে৷ এগুলো কোনোভাবেই আইনসংগত নয়৷ আমাদের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যা করা প্রয়োজন, একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সেই কাজটি করবে৷ আমাদের যে দুজন ছাত্র-প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন, তাদের মাধ্যমে যেভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায়, আমরা সেই কাজটি করব৷’

সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কেউ ফুল দিয়ে তার শোক পালন করতে চায়, আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাকে বাধা দিতে পারি না৷ স্বাধীন বাংলাদেশে যখন যে ক্ষমতায় এসেছে; তখন শুধু তার সুপ্রিম মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, বাকিদের শ্রদ্ধা জানানো দূরের কথা, উল্টো ছোট করা হয়েছে৷ যার যতটুকু সম্মান প্রাপ্য, ইতিহাসে যে জায়গাটুকু তারা ধারণ করেন, তা তাদের দেওয়া হয়নি৷ বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কথা বললে যে মানুষগুলোর অবদান একদম অনস্বীকার্য, তাদের প্রত্যেককে তাদের অবদানের জন্য স্মরণ করতে হবে৷ কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছোট করা যাবে না৷ শেখ মুজিবুর রহমানের যতটুকু সম্মান প্রাপ্য, তা তাকে দিতে হবে; একইভাবে জিয়াউর রহমানের যে সম্মান প্রাপ্য, তাকে তা দিতে হবে৷ এত বড় একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরে দাঁড়িয়েও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য যখন নেতিবাচক কাজগুলো করা হয়, আমরা আমাদের জায়গা থেকে এগুলো কখনোই সমর্থন করি না৷ আমাদের মধ্যে যদি কেউ এ কাজগুলো করে থাকে, তাদের বয়কট করা হোক৷’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ধানমন্ডি ৩২-এ গিয়েছিলেন৷ তার গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে৷ কেন? তিনি যদি ওই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, তিনি সেখানে ফুল নিয়ে যেতে পারেন, আমরা বাধা দিতে পারি না৷ বরং আমরা যদি মনে করি, তিনি যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, যে ব্যক্তিকে তিনি অনুসরণ করেন, তিনি অনুসরণযোগ্য নন, আমরা তাকে বয়কট করতে পারি৷ কিন্তু তার গাড়িতে হামলা করা বা গায়ে হাত তোলার অথোরিটি আমাদের কেউ দেয় না৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা সব জায়গায় বলেছি, যেটি ন্যায্য ও ন্যায়সংগত, সেটিই যেন বাস্তবায়ন হয়৷’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কিছু বার্তা দিয়েছেন সারজিস আলম৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট বার্তা, যেখানে যখন পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম আসবে, তাঁদের দায়িত্ব বুঝে দিয়ে ছাত্রসমাজকে সেখান থেকে সরে যেতে হবে৷ আপনাদের অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসে ফিরে যেতে হবে৷’

 



আরো পড়ুন