২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



‘পরিবহন সংকট’ নিয়ে যত অভিযোগ নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের

তৌফিক আল মাহমুদ, নোবিপ্রবি || ২৮ মে, ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম
‘পরিবহন সংকট’ নিয়ে যত অভিযোগ নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের


নোয়াখালী  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন মেসে থাকেন।  শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য বাসের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ফলে নিয়মিত ক্লাস করতে যাওয়া-আসায় ভোগান্তি বাড়ছে তাদের। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে বাস বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের  অভিযোগ, বছরান্তে বাসে যাতায়াতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। অথচ ইদানীং বাসে জায়গা পাওয়া যায় না। উল্টো  ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে যেতে হচ্ছে। বিশেষত ৯ টা ও ৯.৩০-এর বাসে শিক্ষার্থীর তুলনায় বাসের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই আবাসিক সমস্যার কারণে মাইজদীকেন্দ্রিক বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। ফলে তাদের ক্যাম্পাসে যেতে ধরতে হয় ৯ টা বা সাড়ে ৯ টার বাস। কারণ বেশিরভাগ ডিপার্টমেন্টের ক্লাস শুরু হয় ৯ টার পর।  তাই অনেক সময় ভোগান্তি হয় ৯ টা বা সাড়ে ৯.৩০ টার বাস ধরতে। এছাড়া ক্যাম্পাস থেকে স্বল্প দূরত্বে যেসব শিক্ষার্থী বসবাস করেন, তাদের প্রধানত গণপরিবহন ও অটোসার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারেও শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নোবিপ্রবির ৬ অনুষদ ও ২ ইন্সটিটিউটের অধীনে ৩৩ বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের  ২ হল ও ছাত্রীদের ৩ হল মিলিয়ে মোট আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ ভাগ বা সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন মেসে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল থেকে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ রয়েছে ২১টি বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন ১১ বাসের পাশাপাশি ১০টি বিআরটিসির বাসও রয়েছে। এগুলো ভাড়ায় চালিত।  

বাসে ভোগান্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন অনাবাসিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, হলে সিট না পাওয়ায় শহরকেন্দ্রিক বিভিন্ন জায়গায় মেস ভাড়া করে থাকতে হয়। মেস থেকে ক্লাস করতে যাওয়ার পথে পরিবহনে অনেক সময় জায়গা থাকে না। শহর থেকে সকাল ৮টা, ৯ টা এবং ৯.৩০ টায় নিয়মিত বাস যায় ক্যাম্পাসে। সুধারাম থানার সামনে থেকে বাস ছাড়লেও বড় মসজিদ মোড়, পৌরবাজার, বিশ্বনাথ, রশীদ কলোনি, হোয়াইট হল, দত্ত বাড়ির মোড়, দত্তের হাট  ও সোনাপুর থেকেও শিক্ষার্থীরা বাসে ওঠেন। বর্তমানে বাসের তীব্র সংকটের কারণে পৌর বাজার বা বিশ্বনাথ থেকেই বাসে দাঁড়ানোরও জায়গা পাওয়া যায় না। যে কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই বাসে উঠতে না পেরে ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।

নোবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সমস্যার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই মাইজদীতে মেসে থাকতে হয়। আমাদের যাতায়াতের  জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিবহন আছে, সেগুলো শিক্ষার্র অনুপাত খুবই কম। আমাদের বেশিরভাগ ছাত্র- ছাত্রীদেরই আসা-যাওয়া করতে হয়  বাসের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। এমনকি দরজার বাইরে ঝুলে ঝুলে। যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টকর। আরও দুঃখের বিষয় হলো আমরা যারা রশীদ কলোনি, গ্যারেজ, হোয়াইট হল, কিংবা দত্তের হাট থাকি, তারা বাসে সিট পাওয়া  কিংবা ঝুলে ঝুলে যাওয়া তো দূরের কথা বাসে উঠতেও পারি না। সবশেষ গত ২১ মে মঙ্গলবার সকাল ৯.৩০টায় অসংখ্য শিক্ষার্থী বাস উঠতে পারিনি। রশীদ কলোলির পর থেকে বাস কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পরে সবাইকে নিজ খরচে যেতে হয়েছিল। যেটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ইদানীং পরিবহনের  সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানের জোর দাবি জানচ্ছি।’

রশীদ কলোনির মেসে থাকা এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রত্যেকদিন সকাল সাড়ে নয়টার বাসে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বাস সিট পাওয়া যায় না। এমনও দিন আছে, যেদিন বাসে ওঠা যায় না। আমি প্রত্যেকদিন রশীদ কলোনি থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে বাসে ওঠার জন্য রশীদ কলোনি দাঁড়িয়ে থাকি । তবে কিছু কিছু দিন যদি কপাল ভালো থাকে তবে, বাসে দাঁড়ানোর মতো জায়গা পাওয়া যায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, বাসের ভেতরে কোনো জায়গায় নেই। যেখানে আমাদের বাসের দরকার ৮ থেকে ৯টি; সেখানে কোনো কোনো দিন ৯:৩০ টার দিকে চারটা বাস দেওয়া হয়। যার কারণে বাসে বসা তো দূরের কথা; দাঁড়ানোর জায়গাটাও পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেক সেমিস্টারে এই বাসের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিচ্ছে, সেহেতু অবশ্যই এই দিকে খেয়ালও রাখতে হবে। কারণ আমরা যদি ঠিকভাবে  ক্যাম্পাসে নাই যেতে পারি, তাহলে ক্লাস করবো কিভাবে?  

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাসের সিডিউল বাড়ানো হোক। কারণ শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সর্বশেষ বাস ৯.৩০টায় হওয়ায় যাদের ক্লাস ১১ টা বা ১২ টায়, তাদেরও ৯.৩০টার বাস ধরতে হয়। যদি পরবর্তী সময়ে ১০.৩০টায় বাস সিডিউল করা যায়, তাহলে ভোগান্তি কিছুটা কমবে।’

বাসে ভোগান্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে নোবিপ্রবি'র পরিবহন প্রশাসক ড. কাউসার হোসেন বলেন, ‘বাসের বিষয়ে এই পর্যন্ত আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এখন জানতে পেরেছি। প্রয়োজনে বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবো, যেন  শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন,‘বাসের বিষয়ে এই পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ আসেনি। এখন জানতে পেরেছি। পরিবহন প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে বাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবো।’

পরিবহন পুলে বাস বাড়ানোর বা নতুন বাস কেনার প্রশ্নে ড. নেওয়াজ বলেন, ‘এখন বাস ক্রয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে, আমাদের বাজেট আছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে বাস কেনার সিদ্ধান্ত নেবো।’



আরো পড়ুন