জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে মাসব্যাপী এই আয়োজন। প্রথম দিকে শীত ও বিভিন্ন কারণে মেলা জমে না উঠলেও ২১তম দিনে এসে জমে উঠেছে। শনিবার (২১ জানুয়ারি) ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই অন্যান্য দিনের তুলনায় দর্শনার্থীরা বেশি আসতে শুরু করেন মেলায়। আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড়ে পূর্ণ হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। স্টলে স্টলে চলছিল ক্রেতাদের সমাগম।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, খাবারের দোকান থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক্সের স্টল সব খানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পহেলা জানুয়ারি ২০২৩ থেকে মেলা শুরু হয়। শুরুতে লোকসমাগম কম ছিল। তার ওপরে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। তবে এখন পুরোদমে জমে উঠেছে মেলা। মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১ প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ১০৬টি স্টল বেড়েছে। বিদেশি ১০ দেশের ১৭টি স্টল রয়েছে। এবার বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মেলায় এসেছেন জাহাঙ্গির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি এবারেই প্রথম পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আসলাম। খুব ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর পরিবেশে বাণিজ্য মেলা হচ্ছে।’
ক্রেতা আতিকুর রহমান বলেন, ‘পণ্যের দাম ঠিকই আছে। ভালো লাগছে মেলায় এসে।’
তবে মেলা প্রাঙ্গণ ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেলেও বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ‘গতবারের তুলনায় এবারের বাণিজ্য মেলায় বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হতো, তখন ঢাকার চতুর দিকের দর্শনার্থীরা আসতো। কিন্তু এখন মেলা রাজধানী থেকে দূরে হওয়ায় দর্শনার্থীরা আসতে চায় না।’
স্টাইল জোনের বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার প্রায় ২৫ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে। পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিভিন্ন কারণে মানুষের হাতে টাকা নেই। ক্রেতা বা দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন ঘুরতে ও খাওয়া-দাওয়া করতে। কেনাকাটা তারা খুব একটা করছেন না।’
পাকিস্তান থেকে ২০১২ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করে কাশমির ক্রাফট। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রেতা ইমরান হোসেন বলেন, ‘আগারগাঁওয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিক্রি বেশি হতো। কিন্তু এখানে বিক্রি বেশি হয় না।’
এদিকে, মেলা প্রাঙ্গণে ভিসতা ইলেকট্রনিক্স স্টল নিয়েছে। স্টলগুলোর বিক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী বিক্রির পরিমাণ কমে গেলেও ভিসতা অ্যান্ড্রয়েড টিভি ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা অর্কো। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। ৫৫ ইঞ্চি ভিসতা অ্যান্ড্রয়েড টিভির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আজীবন বলেন তাদের বেচাকেনা কম হয়। এটা তাদের পলিসি। মেলায় যারা আসছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের হাতে কিছু না কিছু পণ্য দেখা যায়, যা তারা এই মেলা থেকেই কিনেছেন। ভ্যাট ট্যাক্স বেশি দেওয়ার ভয়েও অনেক সময় ব্যবসায়ীরা বলছেন বেচাকেনা কম। আবার আগামী বছর যেন স্টলের বরাদ্দ না বাড়ায় সেজন্যও ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন বেচাকেনা কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলতে পারি গতবার প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী হাসিমুখে গেছেন। এবারও তারা হাসিমুখে যাবেন। আগারগাঁওয়ে যে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হতো, সেখানে শুধু ঢাকার লোকজন আসতো। কিন্তু এখানে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর লোকজনও আসছেন। যতদিন যাবে মেলা আরও বেশি মুখরিত হবে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে বিআরটিসি বাসে ভাড়া লাগে মাত্র ৩৫ টাকা। আর বিকাশে পেমেন্ট করে মেলায় ঢুকতে টিকেট কিনলে সেক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ফ্রি।’
পরিচালক বলেন, ‘গতবার ২৫ লাখ দর্শনার্থী মেলায় এসেছিল। এবার আশা করছি ৪০ থেকে ৪৫ লাখ দর্শনার্থী আসবে। গতবার মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭০ কোটি টাকার মতো। এবার বিক্রির পরিমাণ ১৫০ কোটির কাছাকাছি চলে যাবে। তবে এবার গতবারের তুনায় ১০০টির বেশি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর গতবারের তুলনায় এবারের স্টলের বরাদ্দ ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
উল্লেখ্য, মেলায় যাতায়াতে যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো এবারও বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারে ১৫০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। আর সপ্তাহের অন্যান্য দিনে ৭০-৮০টি চলাচল করছে। এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলছে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলছে।
ঢাকা বিজনেস/এইচ