ইরান ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ তার সীমান্তে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইসলামাবাদ। দেশটি বলছে, এই হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও তিন জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পাকিস্তান ও ইরাক। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এর আগে ইরাক ও সিরিয়াতেও হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরান এই ঘটনাকে ‘ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গ্রুপের’ ওপর হামলা বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একে ইসলামাবাদ উসকানিমূলক ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানাতে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে পাকিস্তান সরকার।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতের ওই হামলার ঘটনায় ‘দুই নিষ্পাপ শিশু নিহত হওয়ার পাশাপাশি তিন মেয়ে আহত হয়েছে।’
তবে কোথায় এ হামলা হয়েছে, তা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। যদিও পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বেলুচিস্তান প্রদেশে এই হামলা হয়েছে। বেলুচিস্তান প্রদেশের সঙ্গে ইরানের প্রায় এক হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত আছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের এ লঙ্ঘন সর্ম্পূণ অগ্রহণযোগ্য। এর পরিণাম গুরুতর হতে পারে।’
এদিকে, এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা নূরের খবরে বলা হয়েছে, জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ আল-আদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত দু’টি ঘাঁটিকে হামলার টার্গেট করা হয়েছে।
এ নিয়ে গত কয়েক দিনে তৃতীয় কোনো দেশে হামলা চালাল ইরান। এর আগে ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, ইরান ও পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রায়ই পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। বলা হয়ে থাকে, একটি দেশে ঘাঁটি তৈরি করে জঙ্গিরা অন্য ভূখণ্ডে হামলা চালায়। তবে এসব ঘটনায় দুই পক্ষের সরকারি বাহিনীগুলোর জড়িত থাকার ঘটনা বিরল।
ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে কয়েকটি যোগাযোগের মাধ্যম থাকা সত্ত্বেও এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি আরও বেশি উদ্বেগের।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান সব সময় বলে আসছে যে, সন্ত্রাসবাদ এ অঞ্চলের সব দেশের জন্য একটি অভিন্ন হুমকি, যা মোকাবিলার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন। এ ধরনের একতরফা কর্মকাণ্ড ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তা দ্বিপক্ষীয় বিশ্বাস ও আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
এদিকে ইরাকও সে দেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। ইরানের হামলাকে আগ্রাসন হিসেবে বর্ণনা করেছে ইরাক।
ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত ও আরও ছয়জন আহত হয়েছে।
ইরানের এ হামলার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ দায়েরের কথাও জানালো ইরাক।
ইরান ইরাক ও সিরিয়ায় তার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সমর্থন করে বলেছে, ইরানের নিরাপত্তা লংঘন যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সুনির্দিষ্ট এ হামলা চালানো হয়েছে।