বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি-পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা বহুগুণ বেড়ে গেছে। ফলে কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়েই একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। ধৈর্য, কঠোর সাধনা ও মেধা দিয়েই অর্জন করতে হয় এই সাফল্যের মুকুট। তাই এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এবং দিনশেষে নিজেকে সফল প্রমাণ করতে হলে কিছু বিষয় মেনে চলা খুবই জরুরি।
লক্ষ্য নির্ধারণ
বিশ্ববিদ্যালয় দভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই জরুরি এবং সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অনুসরণ করে সর্বোচ্চ শ্রম ও মনোযোগ দিতে হবে। অনেক শিক্ষার্থীই একই সঙ্গে মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। একসঙ্গে অনেক কিছুর প্রস্তুতি নিলে দিনশেষে সঠিক ফল পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া খুবই জরুরি।
পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করা
পরীক্ষায় ভালো করার অন্যতম কাজ হলো একটি সুন্দর পরিকল্পনা তৈরি করা। কী পড়বেন, কতটুকু পড়বেন, কীভাবে পড়বেন– পাঠ পরিকল্পনায় সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তা মেনে চলুন।
সময় ব্যবস্থাপনা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে অনেক কৌশল শিখতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা তার মধ্যে অন্যতম। কীভাবে কম সময়ের মধ্যে উত্তর করা যায়, তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন। এর জন্য শর্টকাট টেকনিকসহ আরও বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়িতে বসে সময় দেখে দেখে পরীক্ষা দিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট টাইম সেট করে নিজেকে যাচাই করতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাদ পড়ে যান।
স্বাস্থ্য সচেততা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির সময় শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক চাপের সম্মুখীন হন। এ সময় স্বাস্থ্য সচেতন থাকা অধিক জরুরি। কারণ, স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে পড়াশোনায়ও মন বসবে না। অধিক পড়াশোনার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। দুশ্চিন্তা নিয়ে কোনো কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব না। তাই হতাশ হওয়া যাবে না।
পাঠ্যপুস্তক আত্মস্থকরণ
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক খুবই ভালোভাবে আত্মস্থ করা জরুরি। উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মূলভিত্তি। তাই উচ্চ মাধ্যমিক বইয়ের প্রতিটি বিষয় খুব ভালোভাবে বুঝে পড়তে হবে।
বিষয় বিশ্লেষণ ও বুঝে বুঝে পড়া
ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে সিলেবাস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং টপিক অনুযায়ী পড়াশোনা এগিয়ে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কম সময় দেওয়াই শ্রেয়। যে কোনো টপিকের বেসিক সম্পর্কে খুবই ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং টপিক বুঝে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ভিত্তি মজবুত থাকলে যে কোনো প্রশ্নের সহজেই উত্তর করা সম্ভব।
সময় ব্যবস্থাপনা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে সফল হতে হলে অত্যন্ত কৌশলী হতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা তার মধ্যে অন্যতম। কীভাবে কম সময়ের মধ্যে উত্তর করা যায়– এর জন্য প্রচুর অনুশীলন ও কৌশলী হতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নিজেকে যাচাই করা যেতে পারে। সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী ব্যর্থ হন।
নিয়মিত অধ্যয়ন করা
অনেক সময় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী খুব আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে; কিন্তু মাঝে মাঝে পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। যার কারণে পড়াশোনার ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়গুলো অধ্যয়ন করেন, তা পরে ভুলে যান। এক দিন পড়তে না বসলে পরে আর পড়তে ইচ্ছে করবে না। আপনার মনোযোগ নষ্ট করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
প্রচুর অনুশীলন
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য প্রচুর অনুশীলন প্রয়োজন। বেশি বেশি অনুশীলনের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় অন্যদের থেকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। যে বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা বেশি বেশি অনুশীলনের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আত্মবিশ্বাস
ভর্তি পরীক্ষায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে টিকে থাকতে আত্মবিশ্বাসী হওয়া খুবই জরুরি। ‘আমি পারব’– এটি নিজের মাঝে ধারণ করতে হবে। এ সময় অন্য কারও সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা যাবে না। কারণ অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়েন কিংবা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আত্মসন্দেহ আপনার আত্মবিশ্বাসকে হ্রাস করতে পারে। আপনার শক্তির ওপর লক্ষ্য রাখুন, অনুপ্রাণিত থাকুন এবং নিজেকে বিশ্বাস করুন।
কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ
কোচিংগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধের রাস্তাগুলো চিনিয়ে দেয়। একটা কোচিং কখনোই একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইয়ে দেয় না। মূল পড়াশোনাটা একজন শিক্ষার্থীর নিজেকেই করতে হয়। বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা আসলেই একটা যুদ্ধ। হাজার হাজার মেধাবীর মধ্যকার মেধা যাচাইয়ের যুদ্ধ। এ সময় নিজেকে সুস্থ ও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা খুবই জরুরি। বলা হয়ে থাকে, সফলতার আরেক নাম আত্মবিশ্বাস। তাই বিভ্রান্ত না হয়ে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে পরিশ্রম করতে হবে।