২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার



শীতের কাপড়ের দোকান: যেখানে ধনী-গরিবের নেই ব্যবধান

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা || ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:০১ পিএম
শীতের কাপড়ের দোকান:  যেখানে ধনী-গরিবের নেই ব্যবধান


গাইবান্ধা শহরের পি.কে বিশ্বাস রোডের দুই ধারে সারি-সারি কাপড়ে দোকান সাজিয়ে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এখানকার দোকানগুলোতে কম দামে শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য বস্ত্র পাওয়া যায়। কয়েক যুগ ধরে এই পট্রিতে অল্প দামে কেনাকাটা করেন নিম্নআয়ের মানুষ। ফলে এটি গরিবের মার্কেট হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছে। কিন্তু সেই মার্কেট এখন ধনীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা হুমড়ি খেয়ে কিনছেন গরম কাপড়।   

পি.কে বিশ্বাস রোড ও টেনিস ক্লাব চত্বরে দেখা গেছে, শীতার্ত মানুষদের গরম কাপড় কেনার দৃশ্য। ফুটপাতের গাউন পট্রিটি গরিবের মার্কেট হিসেবে পরিচিত থাকলেও সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সব পেশা-শ্রেণির মানুষ। আর বেকায়দায় পড়ছেন ছিন্নমূল পরিবারের সদস্যরা। তাদের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় জবুথবু অবস্থায় পড়েছেন।

এরইমধ্যে লক্ষ করা গেছে, পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গাইবান্ধা জেলায় জেঁকে বসতে শুরু করছে শীত। গত কয়েকদিন ধরে মধ্যরাত থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে প্রত্যন্ত অঞ্চল। কনকনে এই শীত নিবারণে সব পেশা-শ্রেণির মানুষ ঝুঁকে পড়েছে গরম কাপড়ের দিকে। ওই পট্রিতে কেউ কিনছেন লেপ-তোশক। আবার কেউ কেউ সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার ও মোজাসহ বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। 

এখানকার অধিকাংশ ক্রেতা ছিন্নমূলের হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত্বদের আনাগোনা লক্ষণীয়।

জানা যায়, নদীবেষ্টি গাইবান্ধার  ৪ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস চরাঞ্চলে। জেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ পেরিয়ে কোনোমেতে বেঁচে থাকা তাদের। এরই মধ্যে শীতে কাবু মানুষগুলো। ছিন্নমূল পরিবারের এইসব মানুষ শীত নিবারণে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সামর্থ্য না থাকায় সেই গরিবের মার্কেটেও কিনতে পাচ্ছেন না শীতের কাপড়। অন্যান্য বছরে এই সময়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ দেখা গেলেও এ বছরে তা ব্যর্তয় ঘটেছে বলে অভিযোগ দুস্থ শীতার্তদের।

এদিকে, শীতের তৗব্রতা বেড়ে যাওয়া চরম বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। তাদের শীতের কবলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম বেশির পাশাপাশি গরম কাপড় কেনার ব্যাপারটিও সমস্যায় যোগ হয়েছে তাদের।

গাইবান্ধ শহরের পি.কে বিশ্বাস রোড়ের গাউন পট্রিতে গরম কাপড় কিনতে আসা নজরুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালক বলেন, শীতের কারণে একদিকে কমেছে রোজগার, অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের শীতবস্ত্র কিনতে হিমসিম খাচ্ছি। তাও আবার গরীবের মার্কেটে ধনীদের ঠেলায় কাপড়াদি কেনা দায় হয়ে পড়েছে।

চরাঞ্চলের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক নামের এক শ্রমজীবী ব্যক্তি বলেন, ‘হামার জাগাদ এলা খুব জার নাগে বাহে। বাড়ির একনা চড়াই বেচে ছোট ছইলের জন্নে গাউন পট্রিতে একনা নিলামি ছুইট্যার কিনব্যার আসছোম। সেটে এলা বড়োলোক মানসের জন্নে পাও দেওয়া যায় না বাবা।’

মেরিনা আক্তার নামের এক স্কুল শিক্ষিকা বলেন, ‘হঠাৎ করে শীত বেড়েছে। বড় বড় মার্কেটে গরম কাপড়ের দাম বেশি। তাই গাউন পট্রির ফুটপাতের দোকানগুলোতে কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে এসেছি। এখানে বিভিন্ন মোটা কাপড়ের ডিপি থেকে বেছে বেছে সোয়েটার-জ্যাকেট ও মোজা কিনেছি।’

পি.কে বিশ্বাস রোডের গরম কাপড় বিক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা অনেকে  শীতকালে অস্থায়ী দোকান বসাই। এখানে কম দামে ভালো মানের শীতবস্ত্র পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে শুধু গরিব মানুষের এখানে কাপড় কিনতেন। ইদানিং সব পেশা-শ্রেণির পরিবারেরা নানা ধরনের বস্ত্র কিনতে ব্যস্ত।’ 

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ‘ছিন্নমূল মানুষেরা যেন শীত নিবারণ করতে পারে, সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে কম্বল বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

ঢাকা বিজেনস/এনই/



আরো পড়ুন