২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার



লাইফ স্টাইল
প্রিন্ট

ডার্ক চকলেটের ভালো-মন্দ

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:০১ পিএম
ডার্ক চকলেটের ভালো-মন্দ


চকলেট ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, তাই না? কথা হচ্ছে, চকলেট কতটা স্বাস্থ্যকর? কোন চকলেট বেশি ভালো? মিল্ক চকলেট নাকি ডার্ক চকলেট? মিল্ক চকলেটের সঙ্গে ডার্ক চকলেটের কিন্তু পার্থক্য আছে!অনেকের মতে, ‘চকলেট মানেই খারাপ, খেলে দাঁত নষ্ট হয়ে যাবে!’ আবার ডার্ক চকলেট নিয়ে প্রচলিত আছে নানা মিথস। কেউ বলেন, ‘এটা খেলে ঘুম হবে না!’ ডার্ক চকলেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই খোঁজেন। ডার্ক চকলেটের আছে কিছু উল্লেখযোগ্য হেলথ বেনিফিটস। চলুন জেনে নেই, ডার্ক চকলেটের ভালো-মন্দ। 

ডার্ক চকলেট না কি মিল্ক চকলেট 
যেসব চকলেটের ৭০ শতাংশই কোকোয়া দিয়ে তৈরি, সেগুলোকে বলা হয় ডার্ক চকলেট। মূলত, তৈরি করার প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে কোন চকলেটে কী পরিমাণ কোকোয়া থাকবে। ভালো মানের ডার্ক চকলেটে থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোকোয়া, এই কোকোয়াতে আছে প্রয়োজনীয় মিনারেলস। মিল্ক চকলেটের সঙ্গে এখানেই কিন্তু পার্থক্য।

মিল্ক চকলেট নাকি ডার্ক চকলেট খাওয়া ভালো 
প্রতি ১০০ গ্রাম ৭০-৮০% কোকোয়া সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেটে আছে দৈনন্দিন চাহিদার (হেলথলাইনের তথ্য অনুসারে),

১১ গ্রাম ফাইবার

৬৬% আয়রন বা লৌহ

৫৭% ম্যাগনেশিয়াম

৮৫% ম্যাঙ্গানিজ

এছাড়া, রয়েছে পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও সেলেনিয়াম। তবে প্রতিদিনের হিসেবে ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খাওয়া কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত। এটি মিনারেলসের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৬০০ ক্যালরির জোগান দেয়। এতে কিছু পরিমাণ সুগারও থাকে। সুতরাং খুব বেশি না, নির্দিষ্ট মাত্রায় ডার্ক চকলেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড
১. কোকোয়াতে পাওয়া ফ্যাট মূলত ওলিক অ্যাসিড, যা কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রেখে হার্টের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হেলদি ফ্যাটি অ্যাসিড অলিভ অয়েলেও পাওয়া যায়।

২. এতে আরও আছে স্টিয়ারিক অ্যাসিড, যা আমাদের ত্বক সুন্দর ও কোমল রাখতে সহায়তা করে।

৩. এতে বিদ্যমান পালমিটিক অ্যাসিড আমাদের শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে। ত্বকের সুস্থতায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ডার্ক চকলেট খাওয়া উচিত কেন?
অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে ডার্ক চকলেট। এতে আছে পলিফেনল, ফ্ল্যাভানল। এমনকি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল হিসেবে পরিচিত ব্লুবেরি, আইস বেরির চেয়েও এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে!

হেলথ বেনিফিটস
১. ফ্ল্যাভানল আমাদের হার্টের ধমনীগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করে এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া, ফ্ল্যাভানল ব্যাড কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

২. চকলেটে ফিনাইল ইথাইলামাইন নামক উপাদান আছে, যাকে বলা হয় ‘লাভ কেমিক্যাল’। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।

৩. পলিফেনল হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়, ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, হজম ক্ষমতা ঠিক রাখে।

৪. ডার্ক চকলেট খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, কেননা এতে থাকা উপাদান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। বয়স্কদের ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার সক্ষমতা বাড়ে। 

৫. ডার্ক চকলেট বিষণ্নতা দূর করতে দারুণ কাজ করে। চকলেটে থাকা ট্রিপটফেন নামের একটি উপাদান স্ট্রেস কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়িয়ে শরীর ও মনে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে।

ডার্ক চকলেট কি ঘুম কমায়
ডার্ক চকলেট নিয়ে প্রচলিত সবচেয়ে কমন মিথ সম্ভবত এটি! এর কারণ হিসেবে অনেকে বলে থাকেন যে এতে ক্যাফেইন থাকে, তাই খেলে ঘুম আসে না! কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্যাফেইনের পরিমাণ এতই কম যে ঘুম না আসার পেছনে একে কোনোভাবেই দায়ী করা যায় না।

সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম কফিবিনে ১৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে যেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেটে আছে মাত্র ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। তাই কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইনের সঙ্গে একে তুলনা করা একেবারেই ঠিক না। 

উল্লেখ্য, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যাফেইন এর হেলদি লিমিট ৪০০ মিলিগ্রাম বলে ধরে নেওয়া হয়। অল্প পরিমাণ ক্যাফেইন থাকার কারণে ডার্ক চকলেট সাময়িক ব্রেইন ফাংশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

বেশি পরিমাণে খেলে কী হবে

হেলদি ও ফিট থাকার জন্য ডেইলি ৫০-৬০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে। ডার্ক চকলেট উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন হওয়ায় বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। ক্যালরির চাহিদা ডার্ক চকলেটের মাধ্যমে ক্রস করে গেলে তা ওজন বাড়িয়ে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই নিজের স্বাস্থ্য ও ডায়েটের কথা মাথায় রেখে চকলেট খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত আমাদের সবারই। বেশি পরিমাণে খেলে ডিহাইড্রেশন, ইনসমনিয়া, মাইগ্রেন, হার্টরেট বেড়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলো হতে পারে। সীমিত পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাওয়া আপনার চকলেট ক্রেভিং মেটানোর পাশাপাশি শরীর ও মন সুস্থ রাখবে।

ঢাকা বিজনেস/এন/



আরো পড়ুন