আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী টাইম-এর সর্বশেষ সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকিাশিত হয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, ‘ব্যাপক জনসমর্থন থাকায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাকে উৎখাত করা সহজ নয়।’ বৃস্পতিবার (২ নভেম্বর) ‘শেখ হাসিনা’স গ্রিপ অন পাওয়ার’ শিরোনামে ৩ হাজার ৪০০ শব্দের এই প্রচ্ছদ প্রতিদেবন লিখেছেন যৌথভাবে লিখেছেন ঢাকায় চার্লি ক্যাম্পবেল ও লন্ডনে আস্থা রাজবংশী।
এতে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমার জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তারাই আমার প্রধান শক্তি।’ তিনি আরও বলেন, ‘একমাত্র বিকল্প হলো আমাকে নির্মূল করা। আর আমি আমার জনগণের জন্য মরতে প্রস্তুত আছি।’
স্বনামধন্য ম্যাগাজিন শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক অর্জনকে আকর্ষণীয় বলে অভিহিত করে বলেছে যে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে শুরু করে খাদ্য রপ্তানিকারকে পরিণত হয়েছে। দেশটির জিডিপি ২০০৬ সালের ৭১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা দেশটিকে ভারতের পরে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। পত্রিকাটি বলেছে, সামাজিক সূচকগুলোও উন্নত হয়েছে, বর্তমানে ৯৮% মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, স্যামসাং-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে চীন থেকে সাপ্লাই চেইন বের করে আনতে উৎসাহিত করছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাতের উদ্ধৃতি দিয়ে সাময়িকীটি বলেছে, ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের উন্নতি করতে হবে। তবে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
সাময়িকীটি বলেছে, শেখ হাসিনা এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এক মেয়াদের পর ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন নারী সরকার প্রধান এবং পুনরুত্থিত ইসলামপন্থী ও একসময়ের হস্তক্ষেপকারী সামরিক বাহিনি উভয়কেই পরাস্ত করার কৃতিত্ব নিয়েছেন। ইতোমধ্যে মার্গারেট থ্যাচার বা ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে তার ক্ষমতায় থাকার ধারাবাহিকতা আরও বাড়াতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা বিএনপিকে একটি ‘সন্ত্রাসী দল’ বলে উপহাস করে বলেন, তারা ‘কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না’। তিনি সাবেক সেনা কর্মকর্তার হাতে এর সৃষ্টির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া সামরিক স্বৈরশাসকের মতো দেশ শাসন করেছেন।’ অতীতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র সমর্থকরা যে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ করেছে, হাসিনা তা তুলে ধরেন।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনার চতুর্থ মেয়াদের অর্থ কী হবে তা একটি মেরুকরণের প্রশ্ন। বেশিরভাগ আমেরিকান তাদের টি-শার্ট ও প্যান্ট সেলাই করা লেবেল থেকে দেশটিকে চেনেন, তবে এটি এমন একটি দেশ যার মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনও মুসলিম দেশের চেয়ে জনসংখ্যা অনেক বেশি। প্রায় ১০ শতাংশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু নিয়ে একটি মিশ্র জাতি। সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও ১৯৮৮ সালে এক সামরিক স্বৈরশাসক ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে একটি স্ববিরোধ তৈরি করে, যা উগ্র মৌলবাদীদের উর্বরক্ষেত্রে পরিণত হয়।
অবাধ নির্বাচনের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসাবে শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, আইডি কার্ড ও বায়োমেট্রিক ডেটার সাথে যুক্ত ভোটার নিবন্ধন চালুর কথা উল্লেখ করেন।
পিতার হত্যাকা-ের পর হাসিনা ও তার বোন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং শেষ পর্যন্ত ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান। ১৯৮১ সালে তাকে বাংলাদেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। তখন হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক তাকে স্বাগত জানায়। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি নির্বাচনের দাবি এবং সামরিক শাসন অবসানের জন্য আন্দোলনে কাটান।
তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমাদের সংগ্রাম। ‘ভাটের অধিকার, ভাতের অধিকার। এটাই ছিল আমাদের স্লোগান।’
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের অধীনে ব্যাপকভাবে ইসলামিকরণ শুরু করে। তার বিএনপি এখন আরও রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটবদ্ধ। আর বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে।
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের বিষয়ে শেখ হাসিনার অবস্থানের অত্যন্ত প্রশংসা করে এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ‘ইউক্রেনে ভøাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা করা (যদিও বিলম্বিতভাবে) কয়েকজন উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতাদের একজন।
/ঢাকা বিজনেস/