২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার



এক ম্যাচ পরেই ব্যাটিং ভুলে গেলো বাংলাদেশ!

নিজস্ব প্রতিবেদক || ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম
এক ম্যাচ পরেই ব্যাটিং ভুলে গেলো বাংলাদেশ!


৩৮.৪ ওভারে ১৯৩ রানে অল আউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেই সেই হতশ্রী বাংলাদেশ। অথচ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামকে বলা চলে ব্যাটিং স্বর্গ। এখানে ব্যাটিং মানে রাশি রাশি রান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১৬৫ রানেই অল আউট হয়েছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩৩৪ রান করলেও, সেই শ্রীলেঙ্কার ম্যাচের আবহই ফিরিয়ে আনলো বাংলাদেশ। এক ম্যাচ পরেই যেন ব্যাটিং ভুলে গেলেন ব্যাটাররা। 

পাকিস্তানি পেসারদের কাছে অসহায় আত্মসমপর্ণ করলো বাংলাদেশ। যদিও এই ব্যাটিং ভরাডুবির জন্য যতখানি পাকিস্তানী বোলারদের কৃতিত্ব তার দশগুন ব্যর্থ বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা। বলা চলে স্বেচ্ছায় উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তারা। ১১ জন ব্যাটারের কেউই দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি। উচিত ছিল দলের খারাপ অবস্থায় সিনিয়রদের দায়িত্ব নেয়া। হয়নি সেটাও। আর জুনিয়রেরা আজ আরো ব্যার্থ। পুরো ম্যাচেই অভাব অনুভূত হয়েছে শান্তর মতো দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের। 

টসে জিতে বিকেলে ব্যাটিং নিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব। হয়তো ব্যাটিং ট্র্যাক বলেই তিনি চেয়েছিলেন আগে স্কোরবোর্ডে হ্যান্ডসাম একটা স্কোর গড়ে পরে বল করা। তবে ১৯৩ রানে আউট হওয়ায় মনে হতে পারে পাকিস্তানী পেসের সামনে পরে দাঁড়ালেও হতো। আগে বল করাটাই ভালো ছিল। 

ইনিংসের প্রথম ওভারটি যায় মেডেন। নাইম কোনো রান করতে পারেন নি। দ্বিতীয় ওভারের শুরুতে নিজের প্রথম বলেই মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মিরাজ। আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান ফিরেন গোল্ডেন ডাক নিয়ে। ১১ তম বলে আসে ইনিংসের প্রথম রান। তবে মনে হচ্ছিল সর্বনাশ হবে। মর্নিং শোজ দি ডে! 

লিটন এসে ভালোই খেলছিলেন। মন বলছিল আজ তিনি সেঞ্চুরি করে তবেই ক্ষান্ত হবেন। কিন্তু সেই পুরনো রোগ। লিটন গ্রামার মেনে ব্যাট করেন; তবে সমস্যা হলো মাথায় কি চাপে হঠাৎ খোঁচা মারেন অথবা ক্যাচ প্র্যাকটিসের মতো করে বল তুলে দেন। আজ যেমন যে বলটি ছেড়ে দেয়ার কথা, তাতে খোঁচা মারতে গিয়ে কট বিহাইন্ড। শূন্য রানে প্রথম উইকেটের পর ৩১ রানেই দ্বিতীয় উইকেট পড়ে। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে ১৬ রান করে (১৩ বলে) আউট লিটন। 

৮ম ওভারের কথা। উইকেটে তখন সাকিব এবং নাইম। আশা ছিল আজ অন্তত নাইম কিছু রান করে দলে তার অন্তর্ভুক্তির যথার্থতা প্রমান করবেন। হলো না। লাফিয়ে উঠা বলে বোকার মতো ক্যাচ তুলে দিলেন। ২৫ বলে করলেন ২০ রান। বাংলাদেশ দলের মতো শক্তিশালী একটি টিমের ওপেনার যদি কোনো ম্যাচেই রান করতে না পারবেন তাহলে কেন তাকে একের পর এক সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তানজিদ তামিমের কথাই ধরুন। জীবনের প্রথম ম্যাচে মাত্র দুটি বল খেললেন, একটিতেও ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি। বল যায় একদিকে, ব্যাট যায় অন্যদিকে! ওপেনিং এ বড় ইনিংস খেলতে পারা ক্রিকেটারদেরই সুযোগ পাওয়া উচিত, যারা গ্রামার মেনে ধৈর্য নিয়ে খেলতে পারবেন। ৭.৩ ওভারে ৪৫ রানে নেই ৩ উইকেট। 

উইকেট বরাবর নিচু হয়ে যাওয়া রউফের বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন হৃদয়। ৯ বল খেলে মাত্র ২ রান যোগ করে ৪৭ রানে পড়ে চতুর্থ উইকেট। তরুন তুর্কি হৃদয়কে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় ব্যাটিং করানো হয়, অথচ কোনো একটা বড়, দায়িত্বশীল ইনিংস পাওয়া গেল না তার কাছ থেকে। আসলে ক্রিকেট হচ্ছে বুঝে শোনে খেলার গেম। পরিস্থিতি বোঝে ব্যাট করতে হয়। দলের যখন বিপর্যয় তখন উচ্চাভিলাষী শট খেলা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। 

সাকিব এবং মুশফিক দুজনেই প্রথম দিকে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে থাকেন। বিগ শট খেলতে যাননি। দারুণ সংযমের পরিচয় দিচ্ছিলেন। দুজনে ১০০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন ১২২ বলে। ২৯ ওভারে রান আসে ৪ উইকেটে ১৪৭। মনে হচ্ছিল খুব ভালো একটা সংগ্রহের দিকেই যাচ্ছে দল। কিন্তু সেই পুরনো রোগ! বিগ শট খেলার ভুত চাপে অধিনায়কের মাথায়। ৩০ তম ওভারের প্রথম বলেই সীমানার কাছে ক্যাচ দেন সাকিব। ১৪৭ রানে পড়ে পঞ্চম উইকেট।িএর আগে ব্যক্তিগত ৩২ রানে নাসিমের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও ভাগ্যগুনে বেঁচে যান সাকিব। 

আশা বেঁচে ছিল তখনো। মুশফিক এবং শামীম পাটোয়ারি ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু ৩৪ ওভারের চতুর্থ বলে শামীম তুলে দিলেন সহজ ক্যাচ। ১৭৪ রানে পড়ে ৬ষ্ঠ উইকেট।

ক্রিজে তখন মুশফিক এবং আফিফ। দায়িত্বে নিয়ে খেলার কথা ছিল অভিজ্ঞ মুশফিকের। কিন্তু হায়, ৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ দেন মুশফিক। খেলতে গিয়েছিলেন বিগ শট। পুরো ইনিংসে ওই একবারই তিনি ডেসপারেটলি বিগ শট খেলতে গিয়েছিলেন। তখনই আউট। দলের রান তখন ১৯০। নেই ৭ উইকেট। পরের বলেই কট বিহাইন্ড তাসকিন। উচিত ছিল স্বীকৃত ব্যাটসম্যান আফিফের দায়িত্ব নিয়ে খেলা। হলো না, ৩৯ তম ওভারের প্রথম বলেই আউট আফিফ। দলের রান তখন ১৯২। আর মাত্র ১ রান যোগ করে দলীয় ১৯৩ রানে আউট হয়ে যায় শরিফুল। ফলাফল- আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শনী বাংলাদেশ দলের। কেউ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারলো না ব্যাটিংয়ে। খেলা হলোনা ৩৮.৪ ওভারের বেশি। 

পাকিস্তান ব্যাট করছে ১৯৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে। ব্যাটিং এর মতো ফিল্ডিংয়েও ব্যর্থ নাইম। শরিফুলের করা দলীয় ৪র্থ ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন নাইম। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১২ ওভারে তাদের সংগ্রহ ৫২ রান। দশম ওভারের প্রথম বলে ফকর জামানকে এলবিডব্লিউ করেছেন শরিফুল। ৩১ বলে ২০ রান করে আউট হন তিনি। এখন মিরাকল না হলে এই ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা নেই। তবে আরো ভয়ের কথা- সুপার ফোরে কোনো ম্যাচ না না জিতেই ফিরতে হয় কি না বাংলাদেশকে!

ঢাকা বিজনেস/এমএ/



আরো পড়ুন