২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

পুঁজিবাজারে ব্যাংক-বিনিয়োগে থাকছে না সীমা: কার লাভ কার ক্ষতি

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৩:০৯ পিএম
পুঁজিবাজারে ব্যাংক-বিনিয়োগে থাকছে না সীমা: কার লাভ কার ক্ষতি


বিভিন্ন শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার লিমিট (বিনিয়োগ সীমা) উঠিয়ে দেওয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এতে পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট দূর হবে। পাশাপাশি বাজারের টার্নওভার বা টাকার অঙ্কে লেনদেন বেড়ে যাবে। আবার অনেকেই জানিয়েছেন, সামগ্রিক পরিবেশ ভালো না হওয়া পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে খুব একটা উৎসাহবোধ করবে না। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে হলে পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাজারকে স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে বিভিন্ন শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ সীমা দীর্ঘদিন অনুসরণ করতো। আইন অনুযায়ী, এতদিন একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তার মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারতো। সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ এটি সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছিল। এখন আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সীমা থাকবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেশের সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আগের নির্দেশনায় সব প্রকার শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট এবং পুঁজিবাজারের অন্যান্য পণ্যে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে ছিল। তবে ব্যাংক-কোম্পানি আইন অনুসারে, ব্যাংকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বন্ড, ডিবেঞ্চার ও ইসলামিক শরিয়াহ্ভিত্তিক নির্ধারিত বিনিয়োগসীমার (এক্সপোজার লিমিট) অন্তর্ভুক্ত হবে না। এতে আরও বলা হয়, এজন্য পুঁজিবাজার বিনিয়োগের বিবরণীর ছক সংশোধন করা হয়েছে। একক এবং একীভূত উভয় ভিত্তিতে সংশোধিত ছক অনুসরণ করে আগের মতো যথানিয়মে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিবরণী দাখিল করতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ সীমা উঠিয়ে দিলেও তা খুব একটা কাজে লাগবে না। ব্যাংকগুলো এই পরিস্থিতিতে খুব একটা বিনিয়োগ করবে না। তবে এই আইন এখন কাজে না লাগলেও ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ছাড়াও ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে। যেমন কোনো ব্যাংক যদি তারল্য সংকটে থাকে, তবে সেই ব্যাংক খুব বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না শেয়ারবাজারে। যতই এক্সপোজার লিমিট উঠিয়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ফিজিবিলিটি যদি না থাকে, তবে সেক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে। তাই পুঁজিবাজারের সামগ্রিক পরিবেশ ভালো করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো যেন সহজ শর্তে বিনিয়োগ করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে পুঁজিবাজার নীতনির্ধারকদের।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমা উঠিয়ে দেওয়ায় সূচকের পাশপাশি লেনদেন বেড়ে যাবে। বাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন চৌধুরী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক্সপোজার লিমিট উঠিয়ে দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে ছিল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগ সীমা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে। পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট অনেকাংশে কমে যাবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন