১৬ জুন ২০২৪, রবিবার



কক্সবাজারে চলছে শুঁটকি তৈরি, আসবে ২,৫০০ কোটি টাকা

তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার || ৩১ আগস্ট, ২০২৩, ১২:০৮ পিএম
কক্সবাজারে চলছে শুঁটকি তৈরি, আসবে ২,৫০০ কোটি টাকা


দেশের বৃহত্তম শুঁটকি পল্লী কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেকসহ জেলার সমুদ্র তীরবর্তী বালুচরের ৩৫ মহালে  শুঁটকি তৈরি চলছে। চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এসব শুঁটকি বিক্রি থেকে আসবে  প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। শুঁটকি উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও জেলার মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য পাওয়া গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাগর থেকে ধরে আনা ২৫ প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি। গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে শুঁটকি উৎপাদন কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। তবে এখন অনুকূল আবহাওয়া ও রোদের কারণে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। মৌসুম পুরোপুরি শুরু হলে দৈনিক উৎপাদন ৫০০ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।  

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বর্তমানে সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অর্গানিক শুঁটকি তৈরির কারখানাও। এক সময় কেবল সাগরে মাছধরা নৌকাতে শুকানো হতো এই ধরনের শুঁটকি। যেখানে বাড়তি কিছুই ব্যবহার করা হতো না। সাগরের মতোই একই কায়দায় এখন অর্গানিক শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে শহরে। বিশেষ করে এই বিষমুক্ত শুঁটকির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে স্থানীয়দের কাছে।  

শহরের নাজিরারটেকের সমুদ্র তীরবর্তী বালুচরের প্রায় ১০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম শুঁটকি পল্লী। এখানে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। যাদের অধিকাংশই নারী। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে (সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) নাজিরারটেকসহ জেলার উপকূলীয় জেলেপল্লীসমূহে শুঁটকি উৎপাদন চলে। তবে বৃষ্টি না থাকলে বছরের অন্যান্য সময়েও কিছু শুঁটকি উৎপাদন হয়। সাগরের বালিয়াড়িতে বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচার ওপর কাঁচা মাছ ৩/৪ দিন রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। এরপর পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। শহরের নাজিরারটেক ছাড়াও মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়াসহ জেলার উপকূলীয় সৈকতে শুঁটকি উৎপাদন হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি মৌসুমে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে মাছের গুঁড়াসহ ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি তৈরি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা। এসব শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। তবে, পর্যটকরা যত বেশি আসেন, শুঁটকির চাহিদা ততই বাড়তে থাকে। তখন ভারত ও মিয়ানমার থেকে আনাহয় বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি।  

জেলা মৎস্য কর্মকতা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে ধরা বিশেষ জাতের ছোট মাছগুলো দিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এখানে উৎপাদিত শুঁটকি কক্সবাজার, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোরসহ সারাদেশের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে।  বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।’

নাজিরারটেক শুঁটকি মহালের ব্যবসায়ী মো. নুরুদ্দিন কোম্পানি জানান, এখানে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা ও নাইল্যা মাছসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টির সময় ছাড়া বছরের ৭/৮ মাস  শুঁটকি তৈরি চলে। আর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ মেট্রিক টন করে শুঁটকি উৎপাদিত হয়।

নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আমানউল্লাহ জানান, এখান থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায়। পরিকল্পিতভাবে শুঁটকি মহালটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করলে এই খাত থেকে রাজস্ব আয় অনেক বাড়বে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন