জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর দীর্ঘ ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো শুরু হয়নি প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবনের নির্মান কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এই ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে সব প্রশাসনিক দপ্তর এক ভবনের আওতায় আসবে। ফলে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ির ভোগান্তি কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, ব্যাংক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, প্রক্টর অফিস, এস্টেট অফিস, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের অফিস, প্রকৌশল অফিস ও নিরাপত্তা শাখাসহ প্রয়োজনীয় দপ্তরগুলো একেকটা একেক জায়গায় রয়েছে। এতে প্রশাসনিক কাজে বিভিন্ন ভবনে দৌড়াতে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া যে প্রশাসনিক ভবনটি রয়েছে, সেটিতে কর্মকর্তাদের বসার পর্যাপ্ত জায়গায় নেই। ফলে একই কক্ষে অনেক কর্মকর্তা গাদাগাদি করে একত্রে কাজ করছেন। এতে কাজের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গতিশীলতা কমছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের অফিস, এস্টেট অফিস ও প্রকৌশল অফিসসহ কয়েকটি অফিসের বেহাল দশা। এসব অফিসের বেশ কয়েকটি রুমের সিলিং খসে পড়েছে, আবার ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। তাই যখন তখন দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই অফিসগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যত্রে সরানোর প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছেন স্ব স্ব অফিসের কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করার পাশাপাশি প্রশাসনিক ভবনও চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের বিষয়ে মতামত নিতে জরিপ চালায় আইএমডি। জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষক, ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ও ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ কর্মকর্তা মনে করছেন নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানান অফিসার সমিতির নেতৃবৃন্দ। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর আগের তুলনায় অনেক বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে একই কক্ষে অনেক কর্মকর্তা গাদাগাদি করে একত্রে কাজ করছে। ফলে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই কর্মকর্তাদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য অনুমোদিত ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন।
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা- তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা হয়। তারা জানান, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ এখন প্রশাসনিক দপ্তরগুলো একেকটি একেক জায়গায় থাকায় প্রশাসনিক কাজে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতিও হয়।' তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করছে, প্রশাসনিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন বলেন, 'অফিসে কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট ডেস্ক নাই, বসার জায়গা নাই। সবাইকে একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসে কাজ করতে হয়। আমাদের দাপ্তরিক কাজের জটিলতা দূর করতে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো বার বার বাধা প্রদান করে এসেছে। তবে আশা করছি খুব দ্রুতই প্রশাসন এ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করবে।'
কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, 'নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আসবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষর্থী সহ সুবিধাভোগী সকলেই এটার সুফল ভোগ করবেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অংশীজন ও প্রশাসনের সহযোগীতা প্রত্যাশা করছি।'
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, 'বর্তমানে অফিসগুলো বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রশাসনিক ভবন, ব্যাংক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, প্রক্টর অফিস, এস্টেট অফিস ও সিনেট হলসহ সব দফতর একই ভবনে স্থাপিত হলে শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে। এছাড়া নতুন প্রশাসনিক ভবনের একটি ফ্লোর শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত হবে। তাই ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা রয়েছে।'
প্রকল্পের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবনের ড্রয়িং ও ডিজাইন অনুমোদনের অপেক্ষায়। এগুলো অনুমোদন হলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন বলেন, 'নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের বিষয়ে গত ১২ আগস্ট আমাদের প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির একটি মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে আমরা তুলে ধরেছি আমাদের যে কম্পোনেন্ট গুলো বাকি আছে; সে কম্পোনেন্ট গুলো টেন্ডার করতে গেলে কিছু ব্যয় বৃদ্ধি হবে। সেটার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছি। চিঠি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। ওখান থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, আর্থিক বিষয়টি অনুমোদন হওয়ার পরে আমরা টেন্ডারে যেতে পারবো।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সমন্বয় করার জন্য সব প্রশাসনিক দপ্তর এক বিল্ডিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এজন্য নতুন ভবন তৈরি করার বিকল্প নেই।’
ঢাকা বিজনেস/উজ্জল/এন