০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলো সরাসরি এটিবি-ভুক্ত হয়ে লেনদেন করতে পারবে: সাইফুর রহমান

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০৫ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:০১ পিএম
পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলো সরাসরি এটিবি-ভুক্ত হয়ে লেনদেন করতে পারবে: সাইফুর রহমান সাইফুর রহমান মজুমদার


ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এখনই খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।’ বৃহস্পতিবার, (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর নিকুঞ্জ-২-এ ডিএসই টাওয়ারে তার নিজ কার্যালয়ে ঢাকা বিজনেসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘এটিবি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে শেয়ার বা সিকিউরিটি ট্রান্সফারের একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট ফি’র মাধ্যমে সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেনে অংশ নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে তালিকাভুক্তির সুপারিশ পেতে হবে কোম্পানিকে। এই কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারের প্রধান মার্কেটের মতো ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং-আইপিও’র মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হতে হয় না। তবে প্রধান মার্কেটের মতো এখানেও সব বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজে বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেনে অংশ নিতে পারবেন।’

ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্মের ইকুইটি সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শেয়ার কোম্পানিকে অফলোড করতে হবে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শেয়ার ব্রোকারেজ হাউজের কাছে জমা দিতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য। তবে এই প্ল্যাটফর্মের ডেট সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার হস্তান্তরের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেমন বুধবার ডেট সিকিউরিটিজের কোম্পানি প্রাণ এগ্রো লিমিটেড আনসিকিউরড গ্যারাটেড বন্ড-১-এর কোনো শেয়ার অফলোড হয়নি।’ 

সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘এখন দুটি কোম্পানি এটিবি প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হয়েছে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড হয়েছে ইকুইটি সিকিউরিটিজে ও প্রাণ এগ্রো লিমিটেড আনসিকিউরড গ্যারান্টেড বন্ড-১-হয়েছে ডেট সিকিউরিটিজে। তবে সরাসরি তালিকাভুক্ত হলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং এক্সচেঞ্জের কাছে জবাবদিহিতা রয়েছে কোম্পানিগুলোর। কোম্পানির শেয়ার হতে হবে ইলেক্ট্রনিক্স শেয়ার ( ডিমেট)। ইকুইটি সিকিউরিটিজে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে সর্বনিম্ন ৫১ শতাংশ শেয়ার নিজেদের ধারণ করতে হবে অর্থাৎ কোম্পানির স্পন্সর অথবা পরিচালকদের কাছে ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। এই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর রেফারেন্স ভ্যালুতে লেনদেন শুরু হবে। প্রথম দুই দিন শেয়ার লেনদেনে ৪ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার থাকবে। তৃতীয় দিন লেনদেন বন্ধ থাকবে এবং চতুর্থ দিন থেকে ৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকারে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন অব্যাহত থাকবে।’

ডিএসই-এর ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, ‘ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট-ওটিসি-এর ১৮টি কোম্পানি এই মার্কেটে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। দুটি কারণে তাদের এই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। প্রথমত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু কোম্পানির শেয়ার ডিমেট অবস্থায় নেই। দ্বিতীয়ত কিছু কোম্পানি উৎপাদনে নেই। যে কারণে এটিবি প্ল্যাটফর্মে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ডিএসই। তবে তারা যদি শেয়ার ডিমেটে রূপান্তর করে এবং উৎপাদনে-ব্যবসায় আসে, তবে তাদের এটিবি প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিএসইতে বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঠিক করতে পারেনি ডিএসই। তাই তিন মাস সময়ে চেয়ে বিএসইসি’র কাছে আবেদন করেছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে ডিএসই’র একটা বোর্ড কাজ করছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।’

যেকোনো বিনিয়োগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক এক্সিট রুট (বের হওয়ার পথ) থাকতে হবে জানিয়ে সাইফুর রহমান বলেন, ‘একজন প্রফেশনাল বিনিয়োগকারী বা সাধারণ বিনিয়োগকারী সবসময় চান, ক্যাপিটাল গেইন বা ডিভিডেন্ড নিয়ে তার ইনভেস্ট ওই প্রডাক্ট থেকে উঠিয়ে নিতে। তাদের জন্যই মূলত এটিবি প্ল্যাটফর্ম। ডিএসই’র প্রধান মার্কেটে তালিকাভুক্ত না হয়েই এসব কোম্পানি থেকে প্রফিট করে বের হয়ে যেতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে শিল্পায়নে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে।’

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত  এমডি বলেন, ‘প্রধান মার্কেটে যেমন সহজেই কেনা যায় বা শেয়ার মেচিউরড হওয়ার পর সেল করা যায়, এই মার্কেটে এই ব্যাপারে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন কোনো বিনিয়োগকারী এই মার্কেটে শেয়ার কেনেন, তিনি ৩ মাসের আগে শেয়ার বিক্রি করলে তার লাভ ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে চলে যাবে। তিনি মুনাফা পাবেন না। প্রফিট পেতে হলে তাকে কেনা শেয়ার কমপক্ষে তিন মাস ধরে রেখে সেল করতে হবে। আর পরিশোধিত মূলধনের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোনো পরিশোধিত মূলধনী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির এই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন