১২ মার্চ ২০২৫, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

ইলিশে-ইলিশে রুপালি বাজার, তবু... (ভিডিও)

হাকিম মাহি || ২৩ আগস্ট, ২০২৩, ১১:৩৮ এএম
ইলিশে-ইলিশে রুপালি বাজার, তবু... (ভিডিও)


ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোয় ইলিশে-ইলিশে ভরে উঠেছে। ক্রেতারা বলছেন, এরপরও কমছে না দাম। বিক্রেতারা বলছেন, আড়ৎ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ৩০-৪০ টাকা বেশিতে বিক্রি না করলে লোকসান গুনতে হবে। আর আড়ৎদাররা জানান, মোকাম থেকেই ইলিশ আমাদের বেশি দামে ইলিশ কিনতে হয়। তাই তারাও দাম বেশি রাখছেন। 

সরেজমিনে ঢাকার কাওরানবাজার, মোহাম্মপুর কৃষি মার্কেট ও আগারগাঁও কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৩ সাইজের ইলিশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ ভেদে সর্বনিম্ন প্রতিকেজি ৮০০ টাকা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। অনেক ক্রেতা সাধ্য না থাকায় ইলিশ না কিনেই  চলে যাচ্ছেন, আবার অনেকে ৫০০ গ্রাম সাইজের কিনছেন।   

আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছেন মো. জসিমউদ্দিন। তার আক্ষেপ, ইলিশ মৌসুমেও এবার দাম কমছে না। তাই তিনি ৫০০ গ্রাম ইলিশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‌‘আমরা কম টাকার বেতনভুক্ত কর্মচারী। ইলিশ মৌসুমেই ইলিশ খাই। এবার এখনো দাম কমছে না। মাঝারি সাইজের ৫০০ গ্রামের একটা ইলিশ নিলাম ৪৫০ টাকা দিয়ে।’

এদিকে, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ক্রেতা ঝুনু বেগম বলেন, ‘আমি একটা এনজিওতে চাকরি করি। বাসায় ছোট ছোট দুটো বাচ্চা আছে। ওরা ইলিশ ছাড়া কোনো মাছ খেতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে ইলিশ কিনি। এত দাম, কোনো সময় বড় ইলিশ কিনতে সাহস পাই না।’  

কাওরানবাজারের পাইকারি ইলিশ কিনতে এসেছেন ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া। তিনি বসিলায় মাছ বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘ভাই ছোট সাইজের ইলিশ পাইকারি নিলাম ৬৫০-৭০০ টাকা করে। এখন বলেন, এখান থেকে মাছ নিয়ে যেতে গাড়ি ভাড়াসহ কত ধরনের খরচ। তাহলে আমি বিক্রি করবো কত করে? এজন্য খুচরা বাজারে দাম কমাতে পারি না।’

বিএনপি বাজারের ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী তারেক মিয়া বলেন, ‘আমরা ভাই ছোট ব্যবসায়ী। ইলিশের দাম-কমে না বাড়ে, সেটা জানি না। যেই দামে পাইকারি কিনে আনি, তার চেয়ে ৩০-৪০ টাকা বেশি দামে বেচি। বাজারেও তো কত ধরনের খরচ।’

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা মাছ কিনি ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তারা যখন যেই রেটে দেন, তার চেয়ে কয়েক টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। ছোটটার দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ৮০০-১ হাজার টাকা, মাঝারোটার দাম ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৫০০ টাকা এবং বড় সাইজের দাম ১ হাজার ৭০০-২ হাজার টাকা কেজি। তবে, আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে মাছের দাম কিছুটা কমবে।’

কাওরানবাজারের পাইকারি ইলিশ বিক্রেতা দাদন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এখানে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল থেকে শুরু করে সব জায়গা থেকে ইলিশ আসে। এখনে পর্যাপ্ত ইলিশ আসছে না। তাই দাম বেশি। আগামী সপ্তাহে দাম কিছুটা কমতে পারে। আমরা আজ ছোট ইলিশ কেজিতে সর্বনিম্ন ৬৫০-৮০০ টাকা, মাঝারি সাইজের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং  বড় সাইজের দাম ১ হাজার ৪০০-১ হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’

চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে আসা এসব ইলিশের বেশিরভাগই গভীর সমুদ্রের। চাঁদপুর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের পদ্মা-মেঘনা তথা স্বাদু পানিতে ধরা পড়া ইলিশের সরবরাহ এখনো পর্যাপ্ত নয়। নদীতে জাল ফেলে যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন, তাতে খরচের টাকা তুলতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। মৌসুমের বাকি সময়ে প্রচুর ইলিশ পাওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।

ক্রেতারা বলছেন, ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের ইলিশের চাহিদা থাকে বেশি। এ সুযোগে দামও বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ কম ধরা পড়ায় দাম বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।

চাঁদপুরে ঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী রাজিব মিয়া বলেন, ‘ইলিশ মৌসুম শুরুর পর আজই সবচেয়ে বেশি ইলিশ উঠেছে। তবে স্থানীয় পদ্মা, মেঘনার ইলিশ তুলনামূলকভাবে কম। সরবরাহের ওপর দাম নির্ভর করে। নোয়াখালীর হাতিয়া, চরফ্যাশন থেকে চাঁদপুর ঘাটে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে।’  

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন