২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



ভরা বর্ষায়ও পুড়ছে পাটচাষিদের কপাল

আশিকুর রহামান, বাগাতিপাড়া, নাটোর || ০৫ আগস্ট, ২০২৩, ০৫:৩৮ এএম
ভরা বর্ষায়ও পুড়ছে পাটচাষিদের কপাল


ষড়ঋতুর দেশে চলছে বর্ষা মৌসুম। তবে, তাপদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে এখনো পানিশূন্য ডোবা-নালা, খাল-বিল। মাঝে মাঝে আকাশজুড়ে কালো মেঘের দেখা মিললেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা মিলছে না। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির অভাবে বিপাকে পড়েছেন বাগাতিপাড়ার কৃষকরা। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যেই শুরু হয়েছে পাট কাটার মৌসুম। জলাধারগুলো পানিশূন্য থাকায় কাটার পর পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। পাট কাটার সময় হলেও অনেকেই রয়েছেন বৃষ্টির অপেক্ষায়। 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুুরে দেখা যায়, ডোবা-নালা, খাল-বিলসহ জলাধারগুলোর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা কাঁচা পাট কাটতে পারছেন না। অনেকেই ভারী বৃষ্টিপাতের অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ ভারী বৃষ্টিপাতের আশায় পাট কাটতে শুরু করলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। 

এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হলেও সময়মতো জাগ দিতে না পাড়লে লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে যারা বৃষ্টির আশায় পাট কাটা শুরু করেছেন, তাদের অনেকেই জাগ দেওয়ার জন্য পুকুর ভাড়া নিচ্ছেন। প্রাকৃতিক জলাধারগুলো পানিশূন্য থাকায় পাট জাগের জন্য পুকুর ভাড়ার চাহিদা বেড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উপায়ে পুকুরে পানি ভরছেন পুকুর মালিকরা। ভাড়ায় পাট জাগের ফলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর উপজেলায় পাটের চাষ হয়েছে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে অনেক কৃষক জমি থেকে পাট কাটতে শুরু করেছেন। 

উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের ডুমরাই এলাকার কৃষক জেহের আলী বলেন, ‌‘এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কাটার সময় হলেও পানি না থাকায় দুশ্চিন্তায় আছি। বীজ, সার, কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কারসহ পাট চাষে এমনিতেই অনেক খরচ। এখন পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিতে গেলে আরও দেড়-দুই হাজার টাকা খরচ বাড়বে।’

উপজেলার চন্দ্রখইর এলাকার কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। পাট কাটার পর তা জাগ দিতে পুকুর ভাড়ার জন্য গুনতে হয়েছে ২ হাজার টাকা। পাট চাষের শুরু থেকে জাগ দেওয়া পর্যন্ত বীজ, সার-কীটনাশক, নিড়ানী ও শ্রমিক বাবদ খরচ প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা।’

কৃষি বিভাগ থেকে পানি স্বল্পতায় পাট পচানোর বিকল্প রিবন রেটিং পদ্ধতির কথা বলা হলেও বেশীরভাগ কৃষক এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। যে গুটি কয়েক কৃষকের এ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা আছে তারা জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানো তুলনামূলক ব্যয়বহুল। সনাতনী পদ্ধতির চেয়ে এতে ১২-১৫ জন শ্রমিক বেশি লাগে। অতিরিক্ত খরচ হয় ৩-৪ হাজার টাকা। তাছাড়া, এ পদ্ধতিতে পাট সংগ্রহ করা হলে পাটকাঠি কাজে লাগে না। 

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, ‘পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় কিছুটা সমস্যা হলেও তা পাটের উৎপাদনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। এ ছাড়া, পানি সংকটে পাট সংগ্রহে বিকল্প হিসেবে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে কৃষকদের আগ্রহী করতে বিভন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, দ্রুতই পানি সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছি।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন