দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট খ্যাত বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ছোট-বড় বিভিন্ন হাওরে অবাধে চলছে পোনা ও ডিমওয়ালা মা মাছ নিধন। যদিও পোনা বা ডিমওয়ালা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এসব এলাকায় পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনকে অপরাধ হিসেবে মনে করেন না এ অঞ্চলের জেলে ও কৃষকরা!
জানা যায়, উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওরেই বর্তমানে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই শ্রমজীবী অনেকেই সকালবেলা জাল নিয়ে বিভিন্ন হাওরে মাছের পোনা ধরতে বের হন। তাছাড়া এ সময়টাতে জেলেরাও হাওরে জাল দিয়ে মাছ ধরেন। জালে কাচকি, শোল, টাকি, কই, গজার, ঘনিয়া মাছের পোনা ধরা পড়ে। তবে পোনার টানে এ সময় ডিমওয়ালা মাছও ধরা পড়ে।
হাওরাঞ্চলে নতুন ধানের গরম ভাতের সঙ্গে কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না করে টাকি ও শোল মাছের পোনা খাওয়ার রীতি বেশ পুরনো। একটা সময় এই নিয়ম সীমিত আকারে থাকলেও দিন দিন বেড়ে চলেছে ডিমওয়ালা ও পোনামাছ ধরার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনের ফলে কেবল মাছ নির্বংশ হচ্ছে না, ধ্বংস হচ্ছে হাওরের অন্যান্য জলজ প্রাণীও।
মাছের অভয়াশ্রম এসব হাওরে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ না করলে দেশীয় মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না, এমন মন্তব্য করছেন সচেতন মহল। সেই সঙ্গে দেশীয় মৎস্যসম্পদ নিধনযজ্ঞ রোধে প্রশাসনের জোর তৎপরতা বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।
মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, চাষের উদ্দেশ্য ছাড়া প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট (চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হতে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) পর্যন্ত শোল, গজার, টাকি মাছের পোনা বা দম্পতি মাছ ধরা ও ধ্বংস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। কেউ এ আইন অমান্য করলে অর্থদণ্ড ও জেল কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
হাওরপাড়ের বাসিন্দারা জানান, হাওর যদি পানিতে একদিনে ডুবে যায়, তবে পোনা মাছ ও ডিমওয়ালা মাছ কম ধরা পড়ে। যদি ধীরে ধীরে পানিতে ডুবে, তবে পোনাসহ সবধরনের মাছ ব্যাপকভাবে ধরা পড়ে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেনি। বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকলে স্রোত তৈরি হবে। আর এতে রুই, ঘনিয়াসহ বিভিন্ন মাছ ডিম ছাড়বে। কারণ পানির স্রোত না থাকলে এ সব মাছ ডিম ছাড়তে পারে না।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নূর জানান, রামসার সাইট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত টাঙ্গুয়ার হাওরের চলছে ডিমওয়ালা মা মাছ নিধন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শতাধিক জেলে টাঙ্গুয়ার হাওরে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ ধরেন। এমনিতেই হাওরে কমছে দেশীয় মাছের সংখ্যা। আর এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে হাওরের রুই মাছ সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে বেশি সময় লাগবে না।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের সাফিক মিয়া বলেন, ‘মৎস্য সংরক্ষণ আইন মেনে মাছ না ধরায় দিনদিন অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। পোনা মাছ না ধরলে হাওরবাসীর মাছের চাহিদা পূরণ হবে নিঃসন্দেহে। পাশাপাশি জেলেরাও বৈধ উপায়ে মাছ ধরে প্রচুর অর্থ আয় করতে পারবেন।’
পাঠাবুকা গ্রামের বাসিন্দা রিপসান হাবিব বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন জেলে ও কৃষকরা স্বল্প আকারে পোনা মাছ শখের বসে ধরতেন। এ সময় ডিমওয়ালা মাছ ধরা নিষেধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে যেন সব ধরনের মাছ নিধনের মহোৎসব চলছে। দেশীয় মৎস্যসম্পদ রক্ষায় এটা বন্ধ হওয়া জরুরি। যদি প্রতিবছর আইন মেনে হাওরে মাছ ধরা হয়, তবে মিঠা পানির মাছের কোনো অভাব হবে না হাওরবাসীর।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ‘হাওরে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই