১৮ মে ২০২৪, শনিবার



সাগরে নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ, মাছ ধরতে প্রস্তুত জেলেরা

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ২৩ জুলাই, ২০২৩, ১২:০৭ পিএম
সাগরে নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ, মাছ ধরতে প্রস্তুত জেলেরা


বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬৫ দিনের দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রোববার (২৩ জুলই) দিবাগত মধ্যরাতে। এখন বাগেরহাটের উপকূলজুড়ে চলছে জেলেদের কর্মচঞ্চলতা। দীর্ঘ অবসর কাটিয়ে জেলেরা নিজ নিজ এলাকা থেকে এসে মৎস্য আড়ৎগুলোতে জড়ো হচ্ছেন। তারা কেউ কেউ ট্রলারে জাল তুলছেন। কেউ রসদ কেনাকাটা ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাগেরহাটের অনেক জেলে সোমবার ভোর থেকে সাগরে মাছ আহরণে ফিশিং ট্রলার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন।  

বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি বাজার, কচুয়ার উপজেলার বগা, শরণখোলার রায়েন্দা, রামপাল ও মোংলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ ধরা সরঞ্জামসহ ফিশিং ট্রলারে করে শনিবার বিকাল থেকে সাগরের উদ্দেশে উপকূলে রওনা দিয়েছেন কয়েক হাজার জেলে। সরকারি হিসাবে বাগেরহাটে ১৩ হাজার জেলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করেন। 

জেলার ৯টি উপজেলায় তালিকাভুক্ত ৩৯ হাজার ৬২৭ জন জেলে থাকলেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে ৯ হাজার জেলেকে দুই ধাপে মোট ৫৬ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সরকার।

শরণখোলার মৎস্যপল্লীতে গিয়ে কথা হয় লোকমান মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, সোলায়মান হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে। তারা বলেন, ৬৫দিনের অবরোধে (নিষেধাজ্ঞা) আমাগো খুবই কষ্টে দিন কাটছে। একদিন সাগরে না গেলে আমাগো সংসার চলে না। মাহজনের কাছ দিয়া হাজার হাজার টাকা ধার নিছি। সুদেও টাকা নিয়া সংসার চালাইতে হইয়ে। এহন সাগরে যাইয়া মাছ ধইর‌্যা সেই দেনা ও সুদের টাকা শোধ করতে হইবে। 

জেলেরা আরও বলেন, আমাগো একেক জনের সংসারে ৬-৭ জন লোক। সরকার আমাগো যে চাউল (চাল) দেয় তা দিয়া তিন মাস চলা যায় না। আমরা সরকারের কাছে চাউলের পাশপাশি তেল, ডাল ও কিছু নগদ টাকা বরাদ্দের দাবি জানাই। 

মৎস্য আড়ৎদার মজিবর তালুকদার ও কবির হাওলাদার জানান, মাত্র পাঁচ মাসের ইলিশের মৌসুম। এর মধ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন এবং অক্টোবর মাসে রয়েছে আরও ২২দিনের অবরোধ। সব মিলিয়ে তিন মাস চলে যায় অবরোধে। বাকি দুই মাস কাটে ঝড়-বন্যায়। এক কথায় ইলিশ ধরা আর হয়ে ওঠে না। অবরোধের পর ধার-দেনা করে ট্রলার খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একটি ট্রলার মেরামতসহ অন্যান্য মিলিয়ে ২-৩ লাখ টাকা খচর হয়েছে। এখন সাগরে গিয়ে যদি কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়া যায়, তাহলে কোনো উপায় থাকবে না।

শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ৬৫দিনের অবরোধ আমাদের কোনো কাজে আসে না। অন্যান্য এলাকার জেলেরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে মাছ ধরেছে। তারা লাভবান হয়েছে। আমরা সরকারের আইন মেনে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। আমরা লাখ লাখ টাকার দেনা হয়েছি। ইলিশ মৌসুমকে লক্ষ্য করে একটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয় একেকজন মহাজনের। কিন্তু অবরোধের কারণে লাভের মুখ আর দেখে না কোনো মহাজন। তাই ৬৫ দিনের অবরোধ না দেওয়ার দাবি জানাই আমরা।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার (২৩ জুলাই) ভোর থেকে জেলেরা সাগরে মাছ আহরণ শুরু করবে। সেজন্য উপকূলে পৌছে গেছেন বাগেরহাটের কয়েক হাজার জেলে। জেলায় এবার সব মিলিয়ে ১৩ হাজার জেলে সাগরে যাচ্ছেন। অবরোধ শেষে জেলেরা ভালো মাছ পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

বঙ্গেপসাগরে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বাড়ার লক্ষ্যে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এরই মধ্যে গত ২১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র সুন্দরবনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বন বিভাগ। সেই হিসাবে রোববার ভোর থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ করতে পারলেও সুন্দরবনের মাছ আহরণে আরও ১ মাস ৭ দিন অপেক্ষা করতে হবে জেলেদের।

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন