২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



লাম্পি রোগ ঠেকানোর উপায় কী

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা || ১৭ জুলাই, ২০২৩, ০৮:৩৭ এএম
লাম্পি রোগ ঠেকানোর উপায় কী


গাইবান্ধার ৭ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) নামের একটি ভাইরাস ছড়িয়েছে গরুর শরীরে। ইতোমধ্যে হাজারেরও বেশি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মারাও গেছে অর্ধশত গরু। এ সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারি ও কৃষকরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই রোগ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের তেমন তৎপরতা নেই।    

সম্প্রতি গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সাদুল্লাপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় দেখা গেছে, গরুর লাম্পি রোগের প্রাদুর্ভাব। সংসারের একমাত্র সম্বল গরুর মৃত্যুতে অঝরে কাঁদছেন অনেকে। কেউ কেউ আক্রান্ত গরু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় প্রায় ১৬ হাজার গরুর খামার রয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ পরিবার গরু পালন করছে। গত এক সপ্তাহে ৬৭৪টি গরু এলএসডি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। এর মধ্যে মারা গেছে ৪টি। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৫০টি গরুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।      

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের জুনিদপুর ও তরফ ফাজিল গ্রামে প্রায় শতাধিক গরু এলএসডি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে শফিকুল, রফিকুল, লতিফ, বারী, মহিবুল ও বাবলুর ৮টি গরু-বাছুর মারা যায়। আর জামালপুর ইউনিয়নে মৃত্যু হয়েছে ৫টি গরু। এছাড়া ফুলছড়ি উপজেলায় আরও ১১টি গরু-বাছুরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সরকারি হিসাব ছাড়াও জেলায় অন্তত আরও কয়েক হাজার গরু সংক্রমিত হয়েছে। 

এ রোগের লক্ষ্মণ সম্পর্কে স্থানীয় পশু চিকিৎসকরা জানান, প্রথমে  আক্রান্ত গরুর জ্বর, ব্যথা ও খাবার অরুচি হয়। এরপর শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুলে যাওয়াসহ মুখ দিয়ে লালা পড়তে শুরু করে। গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত হয়। এতে করে গরুটি দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া মশা-মাছি থেকে এ রোগটি ছড়ায় এবং সংক্রমিত গরুর লালা, দুধ, চোখ বা নাকের পানির মাধ্যমে ভাইরাস বিস্তার ঘটে। যার চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গরু পালন করছিলাম। এরই মধ্যে আমার একটি দেশীয় জাতের এঁড়ে ও একটি বাছুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোনো পরামর্শ না পাওয়ায় চিকিৎসার অভাবে গরু দুটি মারা গেছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন আমার পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।’ 

আরেকজন কৃষক মো. তারা শেখ জানান, তার দুটি গরু এলএসডি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। সরকারি ভেটেরিনারি ডাক্তারদের খবর দিয়েও তার আক্রান্ত গরু দেখতে আসেনি। বাধ্য হয়ে পল্লী ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসেবা নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তিনি।    

উদাখালীর ক্ষুদ্র খামারি আনোয়ার হোসেন ও তোতা মিয়া জানান, তাদের বিদেশি জাতের একটি করে এঁড়ে বাছুর মারা গেছে। এ নিয় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। 

ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনছার আলী মন্ডল বলেন, ‘চরবেষ্টিত এ ইউনিয়নের সর্বত্র লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের এ রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় আক্রান্ত অনেক গরুই মারা যাচ্ছে।’  

সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, ‘এলএসডি ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ অব্যাহত আছে। সেইসঙ্গে গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খামারি-কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন