কাঁচামরিচ কিনতে সাধারণ ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, শুধু যে কাঁচামরিচ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন তা নয়, ঈদুল আজহার পর অধিকাংশ সবজিরই দাম বেড়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতারা বলছেন, কাঁচামরিচ ও সবজির বাজার কোটিপতিদের জন্য। কাঁচামরিচ ও সবজির দাম নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শনিবার (৮ জুলাই) মিরপুর-২ নম্বর কাঁচাবাজার, মিরপুর-১৩ নম্বরের দারুল উলুম মাদ্রাসা মার্কেট, কাওরান বাজার ও গুলশান-১ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর এসব বাজারগুলো ঘুরে জানা গেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কেজিপ্রতি ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা বেড়ে গেছে। শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ খুচরা প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা। আর শনিবার বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা প্রতিকেজি।
ঈদুল আজহার আগেও পাইকাররা কাঁচামরিচ বিক্রি করেছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। সেই ঈদ পরবর্তী সময়ে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দেশে মরিচের সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আড়তে মরিচ আসছে না। ফলে অতিরিক্ত দাম বেড়ে গিয়েছিল।
মিরপুর-২ নম্বর কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে এসেছেন ফাতেমা। ঢাকা বিজনেসকে তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম অনেক বেশি। অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে কাঁচামরিচের দাম। অন্যান্য সবজির দামও বেড়ে গেছে। এখন সবচির বাজার হচ্ছে কোটিপতিদের জন্য। আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য কাঁচাসবজি কেনা খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এদিকে, বাজারগুলো সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ঈদের আগে ঢেঁড়স প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া, গোল বেগুন এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। প্রতিকেজি করলা ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা।
প্রতিকেজি কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। কাঁকরোলের মতো চিচিংগার দামও কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে প্রতিকেজি চিচিংগা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি উসতা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা।
বরবরটি প্রতিকেজি এক সপ্তাহ আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখনো একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চাল কুমড়াও প্রতি পিচ আগের মতো ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচা পেঁপে আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। দেশি ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ আগের মতেই যথাক্রমে ৮০ টাকা ও ৫০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রকারভেদে শসা ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। গাজর ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। প্রতি কেজি পটল ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, মুকি কচু ৯০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরের কাঁচাবাজারে কাঁচামরিচ কিনতে এসেছেন হোটেল ব্যবসায়ী জুয়েল। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ৫ কেজি কাঁচামরিচ তরকারিসহ অন্যান্য খাদ্যে ব্যবহার করতাম। এখন দেড় থেকে ২ কেজি ব্যবহার করি। অতিরিক্ত দাম হওয়ায় কাঁচামরিচের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছি। কাউকে কিছু বলার নেই। খেতে তো হবে।’
মিরপুর-১৩ নম্বরের দারুল উলুম মাদ্রাসা মার্কেটের খুচরা সবজি বিক্রেতা শামিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘শুক্রবারও ৫ কেজি কাঁচা মরিচ ১০০০ টাকায় কিনে এনেছিলাম। একদিনের ব্যবধানে সেই মরিচ কিনেছি ১৬০০ টাকায়। কেজিপ্রতি ১০ টাকা বা ২০ টাকাও যদি বাড়তো তবুও মেনে নেওয়া যেতো। কিন্তু কেজিপ্রতি ১২০ টাকা বেড়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাড়তি দামে কিনে বাড়তি দামে বিক্রি করছি।’
এদিকে, কাওরানবাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। আকারভেদে প্রতিকেজি সোনালি কক ২৭০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা দরে। আকার ভেদে রুই মাছের কেজি ৩২০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, কই ২৪০ টাকা, চিংড়ি ৬৪০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, পুটি মাছ ৫২০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ টাকা, বড় পাবদা ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ আকারভেদে ৭০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিডজন সাদা ডিম ১৩০ টাকা এবং লাল ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য কাঁচাবাজারের মতো এখানে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়।
কাওরান বাজারের কাঁচামরিচের আড়তদার বাবলু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ঈদুল আজহার আগেও কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি করে গ্রামের বাড়ি গেছি। বাড়ি থেকে ফিরে দেখি সেই মরিচ ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝখানে দাম অনেকটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে আবারও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ৩২০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকায় প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন আড়তদাররা।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/