২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



পদ্মা সেতু: স্বপ্ন ছোঁয়ার একবছর

স্টাফ রিপোর্টার || ২৫ জুন, ২০২৩, ১০:০৬ এএম
পদ্মা সেতু: স্বপ্ন ছোঁয়ার একবছর


‘পদ্মা সেতুর যখন একেকটি পিলার হচ্ছিল, তখন মনে হয়েছে প্রতিটি পিলারের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের একেকটি স্বপ্ন জোড়া লেগেছে। যখন উদ্বোধন হলো, তখন মনে হয়েছে সব স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দুঃখ-কষ্ট সব স্রোতের সঙ্গে ধুইয়ে চয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।’ কথাগুলো বলছিলেন পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খলিলুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর আগে এই মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটে কোরবানির ঈদে সবসময় ভয়ে-আতঙ্কে থাকতে হতো। কারণ, দক্ষিণবঙ্গের কোরবানির গরু ট্রলার দিয়ে পারাপার করা হতো। বর্ষার সময় এই নদী ভয়ানক হয়ে যেত। কত গরুর ট্রলার ডুবতো। শত শত গরু মারা যেত, মানুষ মারা যেত। কত মায়ের বুক যে খালি হয়েছে! এই নদী জীবিত পার হওয়া চ্যালেঞ্জ ছিল। আজ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুখে-শান্তিতে বাস করছেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষ।’ 

পদ্মা সেতু বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার সাহস। পদ্মা সেতু দেশের গর্ব। পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মুখের হাসির কারণও এই সেতু।

সেতুর কল্যাণে বদলে যাচ্ছে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর জেলার প্রতিদিনের চিত্র। স্বচ্চলতার পাশাপাশি, শক্ত করেছে এসব এলাকার মানুষের পায়ের তলার মাটি। প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে শিল্প, কল কারাখানা, নতুন নতুন অভিজাত বাণিজ্যিক ভবন, শপিংমল।

পদ্মা সেতু থেকে দেশের অর্জন চমকে দেওয়ার মতো। দেখতে দেখতে এক বছর পার করলো পদ্মাসেতু। স্বপ্ন এখন বাস্তব। আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ, সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।

এক বছর আগেও রাজধানী ঢাকায় আসতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর ঘাটে অপেক্ষা করতে হতো লঞ্চ কিংবা ফেরির জন্য। দুর্ভোগের যেন শেষ ছিল না। ভোগান্তি আর সময়ক্ষেপণ করে একরাশ ক্লান্তির নিয়ে ফিরতে হতো এ পথের যাত্রীদের। অপচয় হতো সময়ের। একটা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু এখন সব কিছুর অবসান হয়েছে। স্বস্তি ফিরেছে যাত্রায়। সময় চলে এসেছে হাতের মুঠোয়।

২০২২ এর ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর, ২৬ শে জুন জনসাধারণ জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে সাবলীল হয়েছে গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ। খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছে।

এরই মধ্যে আরও একটি সুখবর দক্ষিণের মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে। আগামী সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতু দিয়ে চালু হচ্ছে রেল। সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। তখন থেকেই মানুষের মনে একগুচ্ছ স্বপ্ন জড়ো হতে থাকে। যার বাস্তবায়ন হচ্ছে এখন।

এদিকে উদ্বোধনের পর থেকে গত এক বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে টোল আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। আর প্রতিদিন গড় টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৭ টাকা। এই সময়ে সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে মোট ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৫টি যানবাহন। শনিবার (২৪ জুন) পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘সেতু উদ্বোধনের (২৫ জুন ২০২২) পর থেকে গত ২২ জুন পর্যন্ত ৩৬২ দিনে সেতুতে মোট টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৭৯১ কোটি টাকা। তিনি জানান, গত বছর জুন মাসে মাত্র ৫ দিনেই পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে ১০ কোটি ১৪ লাখ ১ হাজার ৮৫০ টাকা। এই সময়ে সেতু পারাপার হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ১০৪টি যানবাহন।’

এ ছাড়া সর্বশেষ ৩ মাসে প্রতিদিন গড় টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬৬ টাকা। সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপারের অনুমতি দেওয়ায় টোল আদায়ের হার বেড়েছে বলে জানা গেছে। 

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন