২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



হাওরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ || ০২ মে, ২০২৩, ০৫:৩৫ পিএম
হাওরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ


আধুনিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সুনামগঞ্জে নির্মাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। বৈশ্বিক মন্দায়ও পুরোদমে কাজ চলমান থাকায় হাওরবাসীর স্বপ্নের হাসপাতালটি দৃশ্যমান হচ্ছে। এ পর্যন্ত অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের কাজ আগামী বছর শেষ হবে। তবে, বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজের দাপ্তরিক কার্যক্রম জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলমান রয়েছে। 

হাসপাতালটি সদর উপজেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মদনপুর এলাকায় (দিরাই রাস্তা) ৩৫ একর জমিতে নির্মাণ হচ্ছে। বাংলাদেশের ৪৭তম সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এটি। এর কার্যক্রম চালু হলে জেলার হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালে উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে থাকবে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। মোট ২৯টি আধুনিক ভবনসহ সীমার ভেতরে থাকবে খেলার মাঠ ও পুকুর। এরমধ্যে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ভবনটির ফিনিশিং কাজ চলছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বেজমেন্টে ৮ তলাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ হচ্ছে, ৯ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনের কাজ চলছে, এ ভবনেই কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ৮ তলাবিশিষ্ট হোস্টেল ভবন, ৬ তলাবিশিষ্ট একটি ইন্টার্ন ডক্টরস ভবন, ১০ তলা সিঙ্গেল ডক্টরস একোমোডেশন ভবন, ৬ তলা স্টাফ নার্স ডরমেটরি ভবন, ৬ তলা স্টাফ ডরমেটরি ভবন, ৪ তলা অডিটোরিয়াম ভবন, ৬ তলা নার্সিং কলেজের একাডেমিক ভবন, ৮ তলা স্টুডেন্ট নার্স হোস্টেল ভবন, দুতলা টিচিং মর্গ অ্যান্ড মরচুয়ারি ভবন, ৩ তলা লন্ড্রি ভবন, ৪ তলা মসজিদ ভবন। এছাড়া ৫ তলা ভিত বিশিষ্ট ৪টি ৫ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। 

এ ছাড়াও, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, অধ্যক্ষ ও পরিচালকের বাসভবনসহ বিভিন্ন আয়তনের ৬টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। পাবলিক টয়লেট, মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন, স্যুয়ারেজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন, হাসপাতাল ভবন ও একাডেমিক ভবনের মধ্যে একটি লিংক করিডোর স্থাপন করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী (তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী) এম এ মান্নান এমপি হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুরোধ জানান গত ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট। পরে একনেক সভায় এম এ মান্নানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরে একনেক চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল-সুনামগঞ্জ নামে ১ হাজার ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেন। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির পর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের পাঠদান কার্যক্রমও শুরু হয়। পরের শিক্ষা বছর আরেকটি ব্যাচ ভর্তি হয়। বর্তমানে এই দুই ব্যাচের শিক্ষাকার্যক্রম শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে।

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, ‌‘সংশ্লিষ্টরা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করছে নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য। পুরো কাজ সম্পন্ন হলেই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের একটি ভবনের কাজ সমাপ্ত হলেও অনেক ভবন এখনও নির্মাণাধীন রয়েছে। হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সুনামগঞ্জ। আগামী জুন মাসে নতুন ভবনে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মনোজিত মজুমদার বলেন, ‘কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে প্রথম ব্যাচের পরীক্ষা চলছে। দ্বিতীয় ব্যাচের ক্লাস চলছে। নির্মাণাধীন সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কাজ শেষ হলে জেলাবাসী ও শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবেন।’

গণপূর্ত বিভাগ সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মমিনুল হক বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলায় প্রকল্পের অর্ধকে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত, আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন