২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



ক্যাম্পাস
প্রিন্ট

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ

মো. হাবিবুর রহমান || ০৮ মে, ২০২৩, ০৫:৩৫ এএম
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ


‘হে নূতন,
দেখা দিক আর বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেনেন না এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। তার সৃষ্টির উৎকর্ষ ও বৈচিত্র্য, ব্যক্তিত্বের বিভা এবং দার্শনিক মানসদর্শন দেশ ও কালের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিশ্রুত হয়েছে স্বকালেই। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবনা ব্যক্ত করেছেন কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় 'রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়' এর শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক মো. হাবিবুর রহমান।

গোলাম কিবরিয়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক আশ্চর্য মানুষ। জীবন-প্রভাব থেকে মৃত্যু-মুহূর্ত অবধি তিনি নব নব রাগে বিচিত্র অনুভবে নিজেকে রচনা করে গেছেন। চিন্তার ও কর্মের বহুধা ও বর্ণালি অভিব্যক্তিতে তার জীবন বিপুল,বিচিত্র ও জটিল হয়ে প্রকটিভ হয়েছে। যতই বয়স বেড়েছে, তার মনের দিগন্ত ততই হয়েছে প্রসারিত। বেড়ে গেছে তার ভাবাকাশের উচ্চতা ও পরিধি। সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যতটা কবি, তারচেয়ে অনেক বড় পণ্ডিত ও দার্শনিক তিনি। শিক্ষিত বাঙালির ভাবমানসই কেবল তিনি নির্মাণ করেননি, তাদের সত্যিকার অর্থে বাঙালি করেছেন। শুদ্ধ ও পরিশীলিত বাংলায় কথা বলতে শিখিয়েছেন। বাংলা গদ্যরীতিতে তিনি অসামান্য পরিবর্তন এনেছেন। তিনি সেই ব্যক্তি যিনি বাংলার বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সন্ধান দিয়েও জাতীয় সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বহুজাতিক স্রোতধারায় নিজেকে বিলীন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। সে অর্থে তিনি পরিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক। কবির গুরুত্ব এই সময়েও কিছুমাত্র কমেনি, বরং উত্তরোত্তর বাড়ছে। পৃথিবীর মহৎ সাহিত্যিকের প্রায় সব গুণই ধারণ করতেন তিনি। তার উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে এক বিস্তৃত ও ধ্রুপদি উপলব্ধির জগতে নিয়ে যায় পাঠককে। ফলে, রবীন্দ্র পাঠে যেকোনো মহৎ সাহিত্য পাঠের অভিজ্ঞতা হয় পাঠকের।

মানবজীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ, জীবনের ইতিবাচকতা, সদর্থক বোধ, সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের এক চিরন্তন ভান্ডার যেন রবীন্দ্রসাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্থক মূল্যায়ন ও তার কর্মের অনুসরণ জাতিকে সমৃদ্ধ করবে। এতে কবি নিজগুণে, নিজ স্থানে অধিষ্ঠিত হবেন। তিনি কখনো হারাবেন না আমাদের হৃদয় থেকে।

শাহাদাৎ হোসেন
বাঙালির উজ্জ্বলতম এক বাতিঘরের নাম রবীন্দ্রনাথ। বাংলা ও বাঙালির অহংকার, বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। শান্তি ও মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্যের পূজারী ও বৈচিত্র্যের সাধক। ব্যক্তি, সমাজ ও বাস্তবতায় তিনি তার অমর কর্মে দেখিয়ে গেছেন মানবমুক্তির দিশা। তার জাতীয়তাবোধ বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস। আর তার সাহিত্যকর্ম সেই প্রেরণার ভাষা। যা মানুষের মনে সঞ্চারিত করেছে দেশপ্রেমের নতুন প্রেরণা। বাঙালির শোক, সংকট কিংবা উৎসব, প্রতিটি ক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক, প্রাসঙ্গিক তার দর্শন। তিনি এমন এক প্রতিষ্ঠান যা আমাদের সংকটে দিয়ে যান সাহস, প্রেমে দিয়ে যান শক্তি। আমাদের মননে মগজে বিশ্বকবির এই ব্যঞ্জনাময় স্থিতি শোষণ, বঞ্চনা, সহিংসতা ও অমানবিকতা প্রতিরোধের মাধ্যমে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখে নিয়মিত। অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে, জীবন-সংগ্রামের প্রতিটি ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে থাকেন প্রিয় রবীন্দ্রনাথ।

উম্মে হালিমা শ্রাবণী
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ভাবতে গেলে শুধু বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা। একজন মানুষ সাহিত্য জীবনে, ব্যক্তিগত জীবনে কতটা সুনিপুণ হতে পারেন তার প্রমাণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যখন তিনি কবি, তখন মনে হয় যেন এ মানুষ ভাবের দেশের মানুষ, প্রেমিক পুরুষ। রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা দিয়েই মনে হয় একজন মানুষ তার সারা জীবনের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে, নতুন বাক্য রচনার প্রয়োজনই হবে না। প্রেমে, বিচ্ছেদে, মিলনে, বিরহে রবীন্দ্রনাথ যেন অনবদ্য।

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখে শেষ করবে এমন সাধ্য কার। তবে ভাবনার বিষয় আমরা তাকে কতটা গ্রহণ করতে পারছি, বিশ্লেষণ করতে পারছি। রবীন্দ্রনাথ একজন যুগোত্তীর্ণ মানুষ। তার কর্মময় জীবন দেখে এটুকু অন্তত বোঝা যায় জীবনকে কীভাবে ব্যয় করা উচিত। জীবনের অপচয় আমাদের মত মানুষদের কর্ম। কিন্তু জীবন যে যাপন করার বিষয় সেটি আমরা এই মহান মানুষটির দিকে তাকালে অনুধাবন করতে পারি। বছরের দুটো দিনে নয়,বছরের প্রত্যেকটা দিন রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক।

মোহনা হক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নামেই যেন দীপ্তিময়তা। অনেকের ভাষায় তিনি কবি, সমালোচক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, সমাজ সংস্কারক। কিন্তু আমার ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন সমাজ দার্শনিক। তিনি কোনো নীতি বা তত্ত্বের উদ্ভাবক নন, বরং সীমার মাঝে অসীমের সংযোগকারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লেখেননি, এঁকেছেন। তার এক একটি কবিতায় উঠে এসেছে নারীর তৎকালীন চিত্র, শিশুর বাৎসল্যতা, পিতার মমতা, প্রকৃতি, সমাজ চিত্র। আমার কাছে মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেভাবে নারীকে আবিষ্কার করেছেন তা অন্য কেউ করেনি। নারী তার কবিতা, গল্পে স্বতন্ত্র এক সত্ত্বা। একজন নারী হিসেবে তাই হয়ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার কাছে এত শ্রদ্ধেয়। ২৫ শে বৈশাখ তার জন্মদিন, তাই এই শুভক্ষণে বলা যায়-

‘ঐ মহামানব আসে;              
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে 
মর্ত্য ধুলির ঘাসে ঘাসে।’

মো. শাহেদ আক্তার
‘হে নূতন, 
দেখা দিক আর বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ’

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন সর্বময় সৃষ্টিশীল মানুষ। এ সৃষ্টিশীলতার তৃষ্ণা আমৃত্যু তিনি বুকের গহীনে লালন করেছেন। স্বীয় সৃষ্টিকর্মে তার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির কাছে বিশেষ একটি নাম। বাংলা সাহিত্যের তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার বিশাল সাহিত্য কীর্তির জন্য তিনি সকল বাঙালির মননে ও চিন্তায় মিশে আছেন। বহুমুখী প্রতিভার সম্বন্বয় ঘটেছিল তার বর্ণময় দীর্ঘ কর্মজীবনে। তার কবি পরিচিতিই তাকে বিশ্ববরেণ্য করে তুলেছিল। আর তাই রবীন্দ্রনাথকে ভূষিত করা হয়েছিল 'বিশ্বকবি' বা 'কবিগুরু ' নামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেধা, রুচি, উদার দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীলতা, জীবনবোধ, জীবনচার ও স্বকীয়তা তৎকালীন বাঙালি সংস্কৃতির উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে আশীর্বাদ হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অসামান্য ও প্রতিভাবান সৃষ্টিকর্ম সারা বিশ্বব্যাপী সবার কাছে চিরকাল সমাদৃত হতে থাকবে।

পিয়াংকা রানী
বাঙালি মননে, চিন্তায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিরন্তন হয়ে রয়েছেন। মানবজীবনের এমন কোনো অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র নেই যেখানে তার চিন্তার ছোঁয়া লাগেনি। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রতিও তার বিশেষ ভালোবাসা ছিল। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তাকে নাড়া দিত। এছাড়াও মানব অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিকের উপর তিনি প্রভাব বিস্তার করে গেছেন। তার শিক্ষাতত্ত্ব ও লেখা ছিল বিশেষভাবে বাস্তববাদী। তাইতো তিনি সারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছেন।

ঢাকা বিজনেস/এন/ 



আরো পড়ুন