২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার



টাঙ্গাইলে সরকারি দপ্তর সামলাচ্ছেন ৫৬ নারী

আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল || ০৮ মার্চ, ২০২৩, ১২:০৩ পিএম
টাঙ্গাইলে সরকারি দপ্তর সামলাচ্ছেন ৫৬ নারী


আজ (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে চলছেন নারীরা। সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলেও কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারীরা। বিশেষ করে জেলায় সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাচ্ছেন নারী সদস্যরা। পুরুষের পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারিগর তারা। সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রেই তাদের অগ্রযাত্রা আজ দৃশ্যমান। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষা অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি অফিস, নির্বাচন অফিস, মেয়র, ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ শীর্ষ পদে ৫৬ নারী সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। বাধা পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফল তারা। সংসারের পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজ করছেন। বাল্যবিয়ে ও যৌতুক ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ নিজ নিজ উপজেলাকে মাদক-দুর্নীতিমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রাখছেন নারী কর্মকর্তারা।  

জানা যায়, টাঙ্গাইলে উপজেলা রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৬টি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ৬টি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। অনেক উপজেলায় ইউএনও এবং এসিল্যান্ড দুইজনই নারী রয়েছেন। 

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১১ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শামীম আরা রিনি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) নাফিসা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আক্তার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা) ফারজানা ইয়াসমিন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জেএম শাখা) নাজিয়া হোসেন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সাধারণ শাখা) সঞ্চিতা বিশ্বাস, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসএ শাখা) নাহিয়ান নূরেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আইসিটি শাখা) সিনথিয়া হোসেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভিপি সেল ও আরএম শাখা শাখা) সাবরিন আক্তার এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (লাইব্রেরি শাখা) জান্নাতুল নাঈম বিনতে আজিজ। 

১২ উপজেলায় ৬ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন- টাঙ্গাইল সদরে রানুয়ারা খাতুন, ঘাটাইলে মুনিয়া চৌধুরী, বাসাইলে পাপিয়া আক্তার, সখীপুরে ফারজানা আলম, মধুপুরে শামীমা ইয়াসমীন এবং দেলদুয়ারে ফারহানা আলী। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ৬ জন নারী সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এরা হলেন- গোপালপুরে মাশতুরা আমিনা, ধনবাড়ীতে ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা, দেলদুয়ারে সূচি রানী সাহা, বাসাইলে আরিফুন্নাহার রিতা, ভূঞাপুরে তামান্না রহমান জ্যোতি, এবং সখীপুরে হা-মীম তাবাসসুম প্রভা।

সিভিল সার্জন অফিসে ২ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন- ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ফারজানা তাহের মুনমুন, মেডিক্যাল অফিসার ডা. শিমু সাহা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনায় ২ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন- ধনবাড়ীতে ডা. শাহানাজ সুলতানা, বাসাইলে শার্লি হামিদ। 

জেলায় শিক্ষা বিভাগে রয়েছেন ১০ জন নারী। তারা হলেন- জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম, শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক বীথি খান, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোকেয়া খাতুন, গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা, সদর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সালমা ইসলাম, মির্জাপুর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহনাজ পারভীন, ভূঞাপুরে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার তাহমিনা আক্তার, গোপালপুরে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কামরুন নাহার, দেলদুয়ারে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোসাম্মৎ খাদিজা এবং কালিহাতীতে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জুলিয়া আক্তার। 

জেলা কারাগারের মহিলা ডেপুটি জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রিজওয়ানা হাসিন। জেলা তথ্য অফিসের সিনিয়র তথ্য অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন তাসলীমা জান্নাত। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রয়েছেন কণিকা মল্লিক। 

জেলা যুব উন্নয়ন অধিপ্তরের ২ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন- যুব উন্নয়ন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক ফাতেমা বেগম এবং সহকারী পরিচালক রওশন আরা বেগম। বিসিক জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম, জেলা সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক ফারহানা পারভীন। জেলার একমাত্র প্রথম নারী মেয়র হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন মির্জাপুরে মেয়র সালমা আক্তার। ভূঞাপুরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন নার্গিস বেগম। 

উপজেলা নির্বাচন অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন ৩ নারী। তারা হলেন- মির্জাপুরে শরিফা বেগম, ভূঞাপুরে নাজমা সুলতানা এবং মধপুরে শিরিন আক্তার। কৃষি বিভাগে উপজেলা কৃষি অফিসার হিসেবে ৫ জন নারী রয়েছেন। তারা হলেন- গোপালপুরে শামিমা আক্তার, সদরে রুমানা আক্তার, সখীপুরে আয়শা আক্তার, ঘাটাইলে বিলশাদ জাহান, কালিহাতী ফারাহানা মামুন। 

পুলিশ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করছেন ২ নারী। তারা হলেন টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফারিয়া আফরোজ, জেলার মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শাহিনা আক্তার। জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইভি ইয়াছমিন। 

উপজেলার নারী কর্মকর্তারা জানান, দেশের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠ প্রশাসনের কাজের সমন্বয় ও তদারকি, জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন তারা। স্ব স্ব উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দেখভালও করতে হয় তাদের। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি এবং বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরকারের স্থায়ী আশ্রয়ণ, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং অসহায় ও সুস্থ মানুষের সহায়তায় কাজ করেন। একইসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।

জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, সরকারের দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে নিজ কর্মস্থলের দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। আমি দায়িত্ব গ্রহণের সময় অনেক সমস্যা ছিল। তবে বর্তমানে সে সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা হয়েছে। যেখানে অনিয়ম ছিল, সেখানেই আমি সঠিক ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে জেলার অবস্থান খুবই ভালো। আমি যোগদানের আগে শিক্ষার হার ছিল ৭৪ ভাগ। বর্তমানে শিক্ষার হার ৯০ ভাগ। আমি ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা অফিসার হিসেবে মনোনীত হয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে ২০১৭ সালে সারাদেশে মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা অফিসার হয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে আমি অনুসরণ করে কাজ করার চেষ্টা করছি। 

ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে যেখানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের চিন্তাই করা যেতো না, সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বগুণে নারীরা আজ সমহিমায় উদ্ভাসিত। ঘাটাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে নারী কর্মকর্তা খুব কমই কাজ করেছেন। সে হিসেবে প্রথমদিকে মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কিছুটা সময় দিতে হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় আমরা নারী কর্মকর্তা নির্ভয়ে কাজ করে যেতে পারছি। কর্মক্ষেত্রে আমরা দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। 

ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ফারজানা তাহের মুনমুন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে কখনো দুর্ভল মনে করেনি। মাতৃত্ব, সন্তান, সংসার এবং পরিবার-এই বিষয়গুলোর সাথে একজন নারী অতোপ্রতোভাবে জড়িত। এসবের জন্য একজন নারীকে অনেক কিছু সেক্রিফাইস করতে হয়। আজকে আমাদের দেশে যেসব নারীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে এগিয়েছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের অনেক কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগুতে হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) নাফিসা আক্তার বলেন, নারী পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। সবক্ষেত্রেই নারীদের অবদান এখন বেশি। নারীরা এখন সব জায়গায় এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে শরীক হয়ে আমরা মেয়েরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই নারীদের কর্মক্ষেত্রে কার্যক্রম পছন্দ করেন। কারণ একজন নারী সঠিকভাবে যত্নসহকারে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। কাজ করতে গেলে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকে। সে চ্যালেঞ্জগুলো আমরা মোকাবিলা করি। সরকারি কাজ আমরা সঠিকভাবে করছি। চ্যালেঞ্জিং পেশা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছেন অসংখ্য নারী।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, প্রজাতন্ত্রে টাঙ্গাইল জেলায় যারা কাজ করছেন, তাদের প্রায় অর্ধেকেই নারী। এমনকি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রায় অর্ধেক নারী সদস্য রয়েছেন। ১২টি উপজেলা প্রশাসনে ৬ জন নারী রয়েছেন। জেলায় কর্মক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত নারীদের কোনো প্রতিবন্ধতার কথা শুনিনি। তবে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে তাদের সহযোগিতা করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং বিভিন্ন বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রাণবন্ত। সফলভাবে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। নারী দিবসে আমি তাদের শুভকামনা জানাই। তাদের সফলতা কামনা করি। 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন