সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীতে (সুলেমানপুর বাজার সংলগ্ন) নাব্যতা সংকটের কারণে আটকা পড়েছে ২ শতাধিক নৌযান (বাল্কহেড)। প্রতিবছর এই সময়ে নদীটির পানি কমে যাওয়ায় দেখা দেয় তীব্র নৌজট। এতে কখনো কখনো ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় ১৫ দিন থেকে এক মাসেরও বেশি। এ বছরও গত ৩-৪ দিন ধরে পাটলাই নদীতে তীব্র নৌজট দেখা দিয়েছে। মাঝিরা জানান, কবে নাগাদ চলাচল স্বাভাবিক হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
জানা যায়, মালামাল পরিবহনে তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বর্ষা ও হেমন্তে ভরসা কেবল নৌপথ। প্রতি বছর উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়ছড়া, বাগলী ও চাড়াগাঁও শুল্কস্টেশন থেকে কোটি কোটি টাকার কয়লা ও চুনাপাথর এবং উপজেলার বালু ও নুড়িপাথর কিনে সারাদেশে সরবরাহ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা সদর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশাসহ পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করা হয়।
আরো জানা যায়, এসব পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। কিন্তু নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকেই পাটলাই নদীতে আটকা পড়ে শত শত বাল্কহেড-বড় নৌকা। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র নৌজট।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে পাটলাই নদীতে গিয়ে দেখা যায়, পাটলাই নদীপথে নাব্যতা সংকটের কারণে কয়লা ও চুনাপাথর বহনকারী ২ শতাধিক নৌযান আটকে পড়ে আছে প্রায় ৩-৪ দিন ধরে। এতে শতাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের জীবনজীবিকা হুমকির মুখে।
মাঝিরা জানান, নৌজটে আটকে থাকার কারণে নৌকাতেই থাকতে হচ্ছে মালিক-শ্রমিকদের। সেই সঙ্গে স্থানীয় সুলেমানপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন আটকেপড়া মালিক ও মাঝিরা।
পণ্যবাহী বাল্কহেড চালক আলম সাব্বির বলেন, ‘কয়লা ও চুনাপাথর ব্যবসায়ীরা নৌকায় কয়লা তুলে দিয়েই তাদের দায় সেরেছেন। লাভ যা তাদেরই হয়েছে। যারা মাল কিনে নিচ্ছেন এবং আমরা যারা মালামাল গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছি, তারা কষ্টে আছি। এখানে আটকে থাকার কারণে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
নৌশ্রমিক কাশেম মিয়া বলেন, ‘পাটলাই নদীর নাব্যতা সংকটে নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে। ২ শতাধিক নৌকা (বাল্কহেড) কয়লা, চুুুুনাপাথরসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আটকে আছে।’
চুনাপাথর ও কয়লা ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিন বলেন, ‘নাব্যতা সংকটের কারণে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কত দিন লাগবে তা বলা যায় না। ক্রেতাদের সময়মতো মালামাল দিতে পারছি না। এতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।’
প্রতিবছর নৌজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান পণ্যবাহী বাল্কহেড চালক কায়েস মিয়া। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি নদীটি দ্রুত খনন করে দিতো, তাহলে হয়তো আমাদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলতো।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ‘প্রতিবছর নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে নৌকাগুলো আটকে থাকছে। নৌজট নিরসনে সবসময় খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘আটকেপড়া নৌযানের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। আশা করছি নদীতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।’
ঢাকা বিজনেস/এইচ