চলছে জানুয়ারি মাস। আর এ সময় আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা থাকে। শীতল আবহাওয়ার কারণে ঠান্ডার দিনে ঘাম হয় না। তবে এমন অনেকেই আছেন যাদের শীতেও ঘাম হয়। একে চিকিৎসকরা ঠান্ডা ঘাম বলেন। চিকিৎসকদের মতে বিভিন্ন কারণে এমন হতে পারে। এমনকি কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবেও এই সমস্যায় ভুগতে হয়। মেডিকেল নিউজ টুডের প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলেন, ঠান্ডা ঘাম শরীরের হঠাৎ এবং তীব্র মানসিক বা শারীরিক চাপের কারণে হতে পারে। এটি শরীরের প্রতিক্রিয়ার একটি অংশ, যা কখনও কখনও মানসিক এবং শারীরিক চাপের মিশ্রণেও দেখা দেয়। আমাদের শরীরে দুটি ধরনের ঘামগ্রন্থি রয়েছে. এগুলো হলো:-
একক্রাইন ঘামগ্রন্থি: যা সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এপোক্রাইন ঘামগ্রন্থি: যা মূলত বগল এবং কুঁচকিতে থাকে এবং সাধারণত মানসিক চাপ বা হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে সক্রিয় হয়।ঠান্ডা ঘাম প্রধানত এপোক্রাইন গ্রন্থির কারণে ঘটে। তাই এটি শারীরিক তাপমাত্রা কমানোর পরিবর্তে মানসিক চাপ বা হরমোনজনিত পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ঠান্ডা ঘামের কারণ: ঠান্ডা ঘাম সাধারণত শরীরের ‘ফাইট বা ফ্লাইট’ প্রতিক্রিয়ার অংশ। এর কিছু সাধারণ কারণ হলো:
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ: উদ্বেগজনিত রোগ যেমন প্যানিক অ্যাটাক, সোশ্যাল অ্যাংজাইটি বা জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের কারণে ঠান্ডা ঘাম হতে পারে।
ব্যথা ও শক: দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত ব্যথার সঙ্গে ঠান্ডা ঘাম হলে এটি শকের লক্ষণ হতে পারে। শক দ্রুত চিকিৎসা না করালে মারাত্মক হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক: ঠান্ডা ঘাম হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে বুকে চাপ, শ্বাসকষ্ট বা হাত, পিঠ, ঘাড়, বা পেটে ব্যথা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
হাইপক্সিয়া: শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে ঠান্ডা ঘাম দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাকে বলা হয় হাইপক্সিয়া। এটি হলে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে এই সমস্যা হতে পারে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
হট ফ্ল্যাশ এবং মেনোপজ: মেনোপজ বা পেরিমেনোপজে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে রাতের বেলা ঠান্ডা ঘাম বা হট ফ্ল্যাশ হতে পারে।
সংক্রমণ: টিউবারকিউলোসিস বা এইচআইভি-সহ বিভিন্ন সংক্রমণের ফলে ঠান্ডা ঘাম দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ: ঠান্ডা ঘামের সঙ্গে অন্য লক্ষণগুলো ঠান্ডা ঘাম সাধারণ ঘামের মতো নয়। এটি শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য ঘটে না। বরং এতে:
ঠান্ডা ঘামের প্রতিকার
প্রতিকারের উপায়: চিকিৎসকরা বলেন ঠান্ডা ঘামের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিকার রয়েছে। এগুলো হলো:-
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন।
ব্যথা নিয়ন্ত্রণ: ব্যথা কমানোর জন্য প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ভয় নিয়ন্ত্রণ: ভয় বা আতঙ্ক দূর করার জন্য মানসিক শক্তি বাড়ানোর চর্চা করুন
আন্ডারলাইন কন্ডিশন চিকিৎসা: হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা অন্যান্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসা করান।
সবশেষে চিকিৎসকরা জানান, ঘাম সাধারণত শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে এটি যদি কোনো গুরুতর শারীরিক বা মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।