২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



শোকজ-বহিষ্কারে উত্তাল আখাউড়া-কসবা বিএনপি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
শোকজ-বহিষ্কারে উত্তাল আখাউড়া-কসবা বিএনপি


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা বিএনপির ৮ নেতাকে শোকজ করে নির্ধারিত সময় পার না হতেই জবাব দেওয়ার আগে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতি। এই ঘটনায় জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনসহ ১৩ নেতা এক যৌথ বিবৃতিতে  তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 

জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক এমপি ও সচিব মুশফিকুর রহমান গত ২১ সেপ্টেম্বর তার নির্বাচনি এলাকার আখাউড়া ও কসবা উপজেলার বন্যাকবলিত মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানেও যোগ দেন তিনি। 

এই ঘটনার পর ২৩ সেপ্টেম্বর কসবা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মুহাম্মদ ইলিয়াস, কসবা পৌর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আশ্রাব আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, বায়েক ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নাদিরুজ্জামান ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, কসবা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি ফুল মিয়া, ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ফরিদ মিয়া, কসবা পৌর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আপেল, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু, পৌর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সজীব শ্রাবণ, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শিমুল, পৌর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অপু মিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আফতাব উদ্দিন নাসির, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য তাদের ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় জেলা বিএনপি এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো। 

এরপর নোটিশে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে জবাব দেওয়ার আগেই বহিষ্কার করা হয় কসবা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মুহাম্মদ ইলিয়াস, কসবা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আশ্রাব আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনসহ ৭ নেতাকে। এছাড়া আখাউড়ায় বহিষ্কার করা হয় উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি হাজী ফিরোজ মিয়াকে। তাদের বহিষ্কার করার পরই কসবা ও আখাউড়া বিএনপি’র সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী ৫ অক্টোবর আখাউড়া ও ১৯ অক্টোবর কসবা উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। 

এতে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বহিষ্কৃত নেতা ও তাদের অনুসারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দুই উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘ত্যাগী-নির্যাতিত নেতাদের বহিষ্কার করে অনুগতদের পদে বসাতে সম্মেলনের এই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। 

সংক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগে, এর আগে, ২০২২ সালে কসবা ও আখাউড়া উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন নেতারা সম্মেলন বন্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। আদালত তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্মেলনের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।  এরফলে আর সম্মেলন হয়নি। ওই ঘটনার পর চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর দলের নেতাদের শোকজ ও বহিষ্কারের বিষয়টি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লিখিতভাবে জানান মুশফিকুর রহমান। এতে তিনি বলেন, বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ দেওয়ার বিষয়ে জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতাদের অফিসিয়ালি জানিয়ে তাদের সহায়তা কামনা করেন। কিন্তু তারা কাকে কোনো রকম সহযোগিতা করেননি। উল্টো রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দিয়েছেন। ঘটনা এখানে শেষ হয়নি, পরন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মামলায় কারাবরণকারী, দলের নির্যাতিত নেতাদের ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে ফেসবুকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর ওই শোকজের জবাব দেওয়ার আগেই তাদের বহিষ্কার করা হয়। মুশফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,  ‘কবির আহমেদ ভূঁইয়ার নির্দেশে এসব কিছু করা হয়।’ 

এদিকে, শোকজ ও বহিষ্কারের ঘটনায় জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনসহ জেলা বিএনপি’র ১৩ নেতা যৌথ বিবৃতিতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন- ‘মুশফিকুর রহমান দলের চেয়ারপারসনের একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টা।  দলের একজন সাবেক সংসদ সদস্য। তার সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কোনোভাবেই দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপ নয়। শোকজ ও বহিষ্কারাদেশ সম্পূর্ণ অন্যায়, অবৈধ, অনৈতিক, অসাংগঠনিক, অসাংবিধানিক এবং দলের নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী।’ যারা ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বিএনপি’র সাবেক জেলা কমিটির এই নেতারা। 

কসবা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘আমাকে উপজেলা ও জেলা থেকে আলাদা করে বহিষ্কার করা হয়েছে। শোকজের জবাব দেওয়ার জন্যে সময় চেয়েছিলাম। সময়তো দেয়নি, উল্টো তাদের বেঁধে দেওয়া পেরুনোর আগেই আমাকে বহিষ্কার করা হয়। আবার অনেকে শোকজের জবাব দেওয়ার পরও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গঠনতান্ত্রিক ও সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’



আরো পড়ুন