লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনায় বালু দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে ১১টি ড্রেজার ও পাইপ ধ্বংস করা হয়েছে। এ সময় সোহেল সর্দার নামের এক বালুদস্যুকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে ৬ বালুদস্যু পালিয়ে যান। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহেদ আরমান।
এই অভিযান পরিচালনা করা হয়, রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চান্দার খাল, ফিশারী গেইট, সাজু মোল্লার ঘাট, জালিয়ার চর ও মেঘনা বাজার সংলগ্ন এলাকায়।
এর আগে ১৮ আগস্ট আদালত পরিচালনা হলে ৫টি ড্রেজার ও পাইপ ধ্বংস করা হয়েছিলো।
গত ২ আগস্ট মেঘনা নদীতে ড্রেজার ও পাইপ জব্দ করতে গেলে ভূমিদস্যুর লোকজন চরবংশী তহশীলদার তাজল ইসলামকে মারধর করে। এ ঘটনায় স্থানীয় কয়েকজনের নামে মামলা হলেও তখন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
আমাদের নিয়ে যতই রিপোট করছেন, দেখছেন না, ? কোন লাভ হয়না। ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান ও দুই ফাড়ি থানার পুলিশ ম্যানেজ করেই আমরা ২০ জন নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছি। সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিন চরবংশী ইউপির আলতাফ মাস্টার ঘাট সংলগ্ন এলাকার বালু দস্যু বিল্লাল কবিরাজ ও মিজান বেপারি এ দম্ভোক্তি করে বলেছিলেন।
উপকূলীয় অঞ্চল মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীসহ খাল-বিল ও ফসলি জমি থেকে অবৈধ ‘বোমা’ (ড্রেজার) মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করছে প্রায় ৫০ জনের বালু দস্যু। এতে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে বড় রাজস্ব, তেমনি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এলাকার রাস্তা-ঘাট, জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী সড়ক, কালভার্ট, বিভিন্ন স্থাপনার সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে নদী, খাল ও পুকুর থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। এ আইনকে অবজ্ঞা করে রায়পুরের উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউপিতে প্রায় ৩০টা অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
মেঘনার তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়নে ড্রেজার বাণিজ্যে জড়িত অন্তত ৫০ জন বালু দস্যু। তাদের মধ্যে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা, তার ছোট ভাই একই ইউপি সদস্য দিদার হোসেন মোল্লা, বাবুল মোল্লা, দুলাল মোল্লা, হাসেম চৌকিদার, নজরুল মেম্বারের ভাই, বাবুল বেপারি, মাসুদ, দুলাল সৈয়াল, জামাল, ফারুক সৈয়াল, জুলহাস মোল্লা, মোঃ সৈয়াল , মিন্টু মোল্লা, মোস্তফা মিয়া, আমির হোসেন, সোহেল হাওলাদার, আরিফুর রহমান মিস্টার, হারুন খাঁ, মোহাম্মদ আলী খাঁ, আলমগীর বেপারি, মনির দেওয়ান, মোঃ মিলন, শিমুল লস্কর, জাকির বেপারি, মিজান বেপারি, বিল্লাল কবিরাজ, মো. কামাল ও আনোয়ার হোসেন।
রায়পুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহেদ আরমান বলেন, জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারের নির্দেশনায় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৫টি এলাকায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এসময় ১১ টি ড্রেজার মেশিন ও প্রায় ৫ কিলোমিটার পাইপ ধ্বংস করা হয়। এ সময় সোহেল সর্দারকে (৪৫) বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ১৫ ধারায় ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান ও আদায় করা হয়। পুলিশ, ছাত্র প্রতিনিধিসহ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।