২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



বাড়ছে ভাসমান পদ্ধতির সবজি চাষ, ফিরছে সচ্ছলতা

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:৩৯ এএম
বাড়ছে ভাসমান পদ্ধতির সবজি চাষ, ফিরছে সচ্ছলতা


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জলাবদ্ধ জায়গায় প্রথমবারের মতো ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের বাঁশবাজার, সলিমগঞ্জ, নবীনগর পূর্ব ও সাতমোড়া এলাকার ৫ স্থানে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে এই ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।

উপজেলায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি বর্ষাকালে জলাবদ্ধ থাকে। বছরের ৫ থেকে ৬ মাস কৃষি জমিগুলো জলাবদ্ধতায় থাকে। এই জমিগুলোতেই চার মাস পরে বোরো ধান উৎপাদন হবে। জলাবদ্ধ জমিগুলোতে নতুন কিছু চিন্তা থেকেই ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়।  উপজেলা চারটি এলাকার পাঁচটি স্থানে এই ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। 

ভাসমান চাষাবাদে প্রচুর সবজি চাষ হয়। স্বাভাবিক চাষাবাদ থেকে, ভাবমানে চাষাবাদে অনেক বেশি সবজি হয়। এই চাষাবাদে কোনো রোগ বালাই থাকে না। ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ নিরাপদ কৃষির সুযোগ অনেক বেশি। এই চাষাবাদে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। এতে বাঁশের খরচটা একটু বেশি পড়ে। এছাড়া আর তেমন কোনো খরচ নেই। ভাসমান পদ্ধতিতে লতা জাতীয় সবজি (চাল কুমড়া, লাউ, শসা, কড়লা) মাচাই রাখা যায়। 

ভাসমান পদ্ধতিতে এই সবজিগুলোর ফলন অনেক ভালো হয় ও বেশ লাভজনক। উৎপাদিত অসময়ে সবজিগুলো বাজার বেশ জোগান দিয়ে থাকে। ভাসমান সবজি চাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক সরেজমিনে পরিদর্শন ও তদারকি করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।

উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক ইসমাইল মিয়া বলেন, ‘টিভিতে এই ধরনের ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখেছি। টিভিতে দেখে উৎসাহ পাই। উৎসাহ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি ও আগ্রহের কথা প্রকাশ করি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার এটি বাস্তবায়ন করেছি। ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকার কলমি শাক, শসা, লাউ বিক্রি করেছি। ফসলের উৎপাদন অনেক ভালো, রোগ-বালাই খুবই কম। অনেকে আমার এই সবজি চাষ দেখতে আসছে। আশা করি, অনেকেই আগামীতে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে।’

উপজেলার বগডহর গ্রামের কৃষক টিপু মুন্সী বলেন, ‘বর্ষাকালে এই অঞ্চলে সবজি আবাদ হবে এটি আমাদের কাছে স্বপ্নের মতোই ছিল। তবে আমাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। আমি ২০ শতক জমিতে লাউ, চাল-কুমড়া চাষাবাদ করেছি।’

নবীনগর ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার গিয়াসউদ্দিন নাঈম জানান, ‘এই জমিগুলো বছরে ৫ থেকে ৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ভাসমান পদ্ধতিতে কমিউনিটি ভিত্তিতে সবজি আবাদ করে ইতোমধ্যে লাউ, শসা, কলমি শাক, পালংশাক উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।’

নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ‘নবীনগর উপজেলায় এই প্রথম ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। ভাসমান পদ্ধতিতে কৃষকদের আবাদ কৌশল শেখাতে ফ্লাড রিকন্ট্রাকশন ইমারজেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্টের আওতায় দুই শতাধিক কৃষককে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় ৫টি প্রদর্শনীতে ভাসমান কাঠামো তৈরি, বীজ ও সার দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছে। প্রযুক্তিটি নিরাপদ কৃষি উৎপাদন প্রযুক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে সমাদৃত হয়েছে। আগামীতে এই প্রযুক্তি সবজি চাষ এই অঞ্চলের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়।’

লিটন জানান, এই পদ্ধতিতে কৃষকদের বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরির খরচটাই একটু বেশি। এছাড়া আর কোনো প্রকার খরচ লাগে না। সেচ লাগে না, পরিত্যক্ত জমিতে এই চাষাবাদ করা হয়। এই চাষাবাদে উৎপাদন অনেক বেশি হয়। এই চাষাবাদে লতা জাতীয় সবজি গুলো বেশি উৎপাদন করা হয়। ফসলগুলো খুবই লাভজনক ও ভালো হয়। তিনি আরও জানান, জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে ঢালি কিংবা বেড তৈরি করে চাষাবাদ কৌশলকে ছড়িয়ে দিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে। আগামী দিনে নিরাপদ ও অসময়ে সবজি উৎপাদন করে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।

 



আরো পড়ুন