২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

ধারাবাহিক

বুড়ি ও পরী

সরোজ মেহেদী || ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:০১ পিএম
বুড়ি ও পরী


দুই.
আজফর আলী আজ দশ বছর ছেলের সংসারে আশ্রিত। বাবাদের সংসারে সন্তানের শৈশব কাটে উজিরের মর্যাদায়। এই চাই তো, সেই লাগবে অর্ডার করে করে। আবদারে-অভিমানে জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। আর বাবারা বুড়ো বয়সে সেই আদুরে ছেলের ডালপালা মেলতে থাকা সংসারে দিব্যি আউট সাইডার বনে যায়। জাস্ট অ্যা উপদ্রব। যেন জেলখানার কয়েদী। তাও ভাগ্য ভালো হলে তাদের কারও কারও ছেলেদের সংসারে আশ্রয় মেলে। নতুবা ভাগ্যাহতদের বেরিয়ে পড়তে হয় নতুন আশ্রয়ের খুঁজে। 

মানুষের বুড়া হয়ে যাওয়ার চেয়ে পাখি হয়ে যাওয়া ঢের ভালো। অন্তত থাকার কয় হাত জায়গার জন্য আতঙ্কে থাকতে হয় না। পাখিদের জন্য পুরো পৃথিবীটাই আবাস। মানুষ সে ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি বলেই হয়তো সে আশরাফুল মাখলুকাত! মনুষ্য জীবনে পিছুটান একরকম শাস্তিরই নামান্তর। 

আজফর আলী হলেন ছেলে রিয়াসাত আলী নাফিসের ঘরে এমনই এক আশ্রিত। ছেলের সংসারে ভয়ে ভয়ে কাটানো জীবন তরী। কখন ছেলের বউ রেগে যায়-কখন মন প্রসন্ন তা বুঝে চলতে হয়। চলেও মুখের সামনে ঝাড়ি হজম করতে হয়। আজফর আলী বুড়া মানুষ। মনে থাকে না কিছুই। এই মনে থাকা না থাকা নিয়ে তাকে কখনো-সখনো জেরার মুখে পড়তে হয়। জীবনের দোলাচলে দুলে দুলে ওঠা ভয়ের পর্দা। ঢেউয়ের মতো খেলে খেলে যায়।  

নিজের জন্য আরেকজন দুঃখী করে তোলার কোনো মানে হয় না। ঝিনুক যেমন মুক্তা সয়। আজফর আলীও সেভাবে দুঃখ সয়। সর্বসহা জীবন যারে বলে।

বউয়ের মর্জি না হলে আজফর আলীর খাবারেও টান পড়ে। ডায়াবেটিস এর রোগীদের নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। ইনসুলিনের পর খাবার না পেলে শরীর অস্থির ও দুর্বল হয়ে যায়। এমনও বহু সকাল গেছে আজফর আলী ইনসুলিন নিয়ে খালি পেটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছেন। তারপর বেহুশ হয়ে চেয়ার উল্টে পড়ে গেছেন। ছেলের বউয়ের তখনো ঘুম ভাঙেনি। ছেলেকে সে কথা বলেননি বা বলার সুযোগ পাননি। 

এক ছেলে ছাড়া এই পৃথিবীতে তার আপন বলতে কেউ নেই। ছেলেকে তিনি আর যাইহোক তার জীবনের টেনশন দিতে চান না। ছেলের বউ এর ঝামেলাও বাড়াতে চান না। আজকের কাজের লোক আসেতো কালকে হাওয়া। একটা সংসারের এতো এতো কাজে বেচারির জীবনও জেরবার। এমনিতেই নিজেকে ছেলের সংসারে বড় অষ্পৃশ্য লাগে। প্রায়ই ভাবেন চলে যেতে পারলে তারা ভার মুক্ত হতো। 

নিজেদের মতো থাকতে পারতো। তিনি আছেন বলে সমস্যার অন্ত নেই। বিরক্ত ছেলের বউ এর চোখ মুখ সে কথাই বলে। তবু তিনি থেকে যান। নিজেই দুঃখ নিজের মধ্যেই চেপে রাখেন। কাউকে বলতে চান না। নিজের জন্য আরেকজন দুঃখী করে তোলার কোনো মানে হয় না। ঝিনুক যেমন মুক্তা সয়। আজফর আলীও সেভাবে দুঃখ সয়। সর্বসহা জীবন যারে বলে।

চলবে...

বুড়ি ও পরী-১| সরোজ মেহেদী  



আরো পড়ুন