২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



কক্সবাজারে বেড়েছে মসলার ঝাঁজ

তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার || ০৬ জুন, ২০২৪, ০৭:০৬ পিএম
কক্সবাজারে বেড়েছে মসলার ঝাঁজ


ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আবারও গরম হয়ে উঠেছে কক্সবাজার শহরের বাজারগুলো। এবারও সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। শহরের বড় বাজার ও উপজেলা বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। 

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং কম থাকায় বাস্তবতার চেয়ে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের বেশ তারতম্য দেখা গেছে। বাজারে কয়েকটি পণ্য বিশেষ করে কোরবানির রান্নার উপাদান আদা, রসুন, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, হলুদ ও ধনিয়ার দাম বেড়েছে। দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে ভুগছে নিম্ন আয়ের মানুষ। পেঁয়াজ ছাড়া সব ধরনের মসলার বাজার বলতে গেলে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমার সম্ভাবনাও নেই বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতাদের দাবি, কোরবানির ঈদের চাহিদা মেটাতে মসলার পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও বাড়তি মুনাফার জন্য ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে কোরবান উৎসবের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই কারসাজি করছেন। তবে প্রশাসন বলছে, এরই মধ্যে বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে। বেশি দামে কেউ মসলাসহ অন্য যে-কোনো পণ্য বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজার বিশেষ করে শহরের বড় বাজার, উপজেলা বাজার বাংলাবাজার, লিংক রোড় বাজারে ঘুরে দেখা যায়, রান্নার জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে। আর রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকায়। এ ছাড়া কেজিপ্রতি দেশি হলুদ ২৩০-২৬০ টাকা, জিরা ৪০০ টাকা , মরিচ (শুকনা) ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাচের কেজি ২ হাজার ২০০- ২হাজার ৬০০ টাকা, লবঙ্গ দেড় হাজার ও গোল মরিচ ৮০০ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আদার দাম ২৪০-২৬০ টাকা হলেও খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ২৮০ টাকার ওপরে। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনিয়া এখন ২০০ টাকা, ৫০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৪৭০ এবং ৫০ টাকা বেড়ে তেজপাতা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

তা ছাড়া প্রতি কেজি সরিষার তেল ২৮০-৩০০ টাকা, মেথি ১২০-১৬০, আলু বোখারা ৪৮০-৫০০, কিশমিশ ৪৪০-৪৬০, কাঠবাদাম ভালোটা ৭৪০-৭৬০, কাজু বাদাম ৮২০-৯৫০, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৬৬০-২ হাজার ৭৫০ এবং পাঁচফোড়ন ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সরকার নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করে বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকার ওপরে। বিক্রেতাদের দাবি, চিনির খুচরা দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তারা পাইকারিতেই চিনি কিনছেন ১২৫-১৩০ টাকায়। এ ছাড়া কেনার সময় তাদের কোনো রশিদও দেয়া হচ্ছে না।

জেলার ঐতিহ্যবাহী সদরের বাংলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মসলার দামও বেড়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও এর জন্য দায়ী। পাশাপাশি মসলার বাজার ভারত নিয়ন্ত্রিত। তারা দাম বাড়ালে আমাদের এখানে ও বৃদ্ধি পায়।

এদিকে মসলার আমদানি না থাকায় সরবরাহ সংকটের কথা বলা হলেও আগের ডলারের রেট স্থিতিশীল রয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে স্থানিয় বাজারে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের আমদানিতে এলসি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। টেকনাফ স্থল বন্দরে পণ্য খালাস জটিলতা, শ্রমিক সমস্যা, সিন্ডিকেটের কারসাজিও বাজারে দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারন বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়িরা। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে যারা কাজ করছেন, তাদের ভূমিকাও যথেষ্ট নয়।

কক্সবাজার বড় বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ জানান, বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে রমজানের ঈদের জন্য। রোজার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে তারা মাঠে কাজ করেছে। কিন্তু এ কমিটি ঈদুল আযহার বাজারে দেখা যায়নি হয়ত ঈদুল আযহার বাজার মনিটরিং এই কমিটির কাজ নয়। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এখনো পর্যন্ত মাঠে আসেনি বাজার মনিটরিং করার জন্য। তিনি জানান, চিনির বাজার চরম উর্ধ্বগতি। ডিও বন্ধ করে দেওয়াই বাজারে চিনি উধাও হয়ে যাচ্ছে। যা আছে তা উচ্চ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চিনির দাম ২৫ টাকা কেজিতে বৃদ্ধির জন্য বলা হলেও তা ঈদ উল আযহার পরে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই বাজারে চিনির দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এখন ১৩০-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।এটা মনিটরিং করা খুবই জরুরি। 

কক্সবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালকের পদ শূন্য থাকায় অভিযান ও বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় বাজারে নিয়ন্ত্রণ কিংবা দামের নিয়ন্ত্রণ কোনটাই হচ্ছে না।

বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘বাজার তদারকিতে আমাদের ভিজিল্যান্স টিম মাঠে রয়েছে। টিমটি আগামীকাল থেকে তাদের অভিযান আরো জোরদার করবে। যারা অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেও নানা অনিয়ম করছে তাদেরকে জরিমানা শুরু করবে। আমরা চাই ক্রেতারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ জন্য নিয়মিত অভিযানও জোরদার করা হবে।’

শাহীন ইমরান বলেন, ‘গতকাল টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শনে আমরা আদা ও পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছি। ঈদুল আজহাকে পুঁজি করে কোনো ব্যবসায়ী যেন নিয়মিত দামের বাইরে অতিরিক্ত মূল্য না নেয়, সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। কোরবানির আগেই বাজারে স্বস্তি মিলবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন