খুলনায় চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে বানানো হচ্ছে কয়লা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন উপকারী গাছ কেটে এখানে কাঠ সরবরাহ করা হয়। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়লার চুলার কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাতে কয়লার গন্ধে ঘুমানো যায় না। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, যারা কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, খুলনার রূপসা উপজেলার বিভিন্নস্থানে অর্ধশতাধিক চুল্লি রয়েছে। এছাড়া পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ও কয়রা উপজেলার নকশাসহ অন্যান্যস্থানে শতাধিক চুল্লি রয়েছে। জনবহুল এলাকায় গড়ে ওঠা এসব অবৈধ চুল্লি থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত কার্বন মোনোঅক্সাইড। পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর চালানো হচ্ছে এ ব্যবসা। এছাড়া চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বৃক্ষ শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে, জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে।
আরও জানা যায়, প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ১০০/২৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমণ কাঠ ১৩০ টাকা কিনে কয় লা তৈরি করে ৪০/৫০ টাকা দরে সেগুলো বিক্রি করা হয়। চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেওয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। পরে কয়লা ঠাণ্ডা করে চটের বস্তায় ভরে ট্রলার, কার্গো বা ট্রাকে করে চালান করা হয়।
রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা রুবেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করায় ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কয়লার চুলার কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
পাইকগাছা উপজেলার বাসিন্দা কামরুল শেখ বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এভাবেই এরা কাঠ পুড়িয়ে আসছে। ফলে গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাই কষ্টকর। আর রাতে কয়লার গন্ধে ঘুমানো যায় না।’
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর জাহান বলেন, ‘যারা কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে অবৈধ ব্যবসা করছেন, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে স্থায়ীভাবে চুল্লিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘যারা চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন, তারা অবৈধভাবে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত দিনে বিভিন্ন চুল্লিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। যারা কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। চুল্লিগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা বিজনেস/এইচ