২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার



টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে ‘জামাই-বউ মেলা’

আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ০৫:৩৪ এএম
টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে ‘জামাই-বউ মেলা’


টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে তিন দিনব্যাপী ‘জামাই-বউ মেলা’। বুধবার প্রথম দিনে সকাল থেকেই ‘জামাই মেলা’ জমে উঠেছে।  বৃহস্পতিবার ‘বউ মেলা’। 

এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।  মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য বিনোদন ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় থাকছে ছোট-বড়  প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় অংশ নিতে এসেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা।   

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩  বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় এই মেলার। তিন দিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০-৩৫ গ্রামের মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়। বিশেষ করে এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের জামাই শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসে। এ কারণেই প্রথম দিন মেলাটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।  জামাইয়েরা হাতে কিছু টাকা দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা গিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনেন। দ্বিতীয় দিন মেলায় বাড়ির বউদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। বাড়ির বউয়েরা জামাইসহ আত্মীয় স্বজন নিয়ে আসে। সে কারণে দ্বিতীয় দিন ‘বউ মেলা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তৃতীয় দিন সব শ্রেণীর লোকজনের আগমনের মধ্যে দিয়ে মেলার সমাপ্ত ঘটে। 

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দোকানিরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আসেন। অন্যদিকে ক্রেতারা কিনছেন। এছাড়া মেলায় মিষ্টি জাতীয় দোকানের সংখ্যা বেশি লক্ষ করা গেছে। বিনোদনের জন্য নাগরদোলা,মোটরসাইল ও গাড়ি খেলাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস দেখা গেছে। মেলায় টাঙ্গাইল জেলায় বিভিন্ন জেলার লোকজনকে দেখা যায়। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলে-মেয়রাও এই মেলা উপভোগ করছেন।  

রসুলপুরের বাসিন্দা ও কথাসাহিত্যিক রাশেদ রহমান বলেন, ‘‘এই মেলার উৎপত্তি কবে, সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মেলাটি দেড় শ বছরের পুরনো।  মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি ‘জামাই -বউ মেলা’ হিসেবে পরিচিত। মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা আগে থেকেই নেন প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কেনেন।’ 

রসুলপুর পাশের গ্রামের সদুল্লাপুর গ্রামের ছানোয়ার হাসেনে নামের এক জামাই বলেন, ‘আমি ১২ বছরে ধরে এ মেলায় আসছি। আমার শাশুড়ি মেলার দিন টাকা দেন। সেই টাকার সঙ্গে আমি আরও কিছু টাকা যুক্ত করে শ্বশুর বাড়ির সবার জন্য জিনিসপত্র নিয়ে যাই। বিশেষ করে মেলায় মিষ্টি জাতীয় জিনিস বেশি কেনা হয়। এই মেলায় এসে আমাদের খুব ভালো লাগে। ঈদের মতোই মেলায় আনন্দ উপভোগ করি।’  

জামালপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী ওবায়দুল হোসেন বলেন, ‘আমি এই মেলায় দীর্ঘদিন ধরে আসছি। এখানে ব্যবসা করে লাভবান হই। এছাড়া আমি দেশের বিভিন্ন স্থানেও যাই।’   

মিষ্টি ব্যবসায়ী মন্টু চন্দ্র দাশ বলেন, ‘এই মেলায় সব চেয়ে বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়। তাই এখানে মিষ্টির দোকান অনেকগুলো রয়েছে। আমি ৮ থেকে ১০ বছর ধরে এই মেলায় মিষ্টি বিক্রি করছি। আজ জামাইয়েরা বেশি মিষ্টি কিনছেন। আশা করছি, প্রচুর মিষ্টি বিক্রি করতে পারবো।’

মেলা কমিটির সদস্য সচিব শামিম আল মামুন বলেন, ‘আমাদের এ মেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে  ৩ শতাধিক দোকান বসেছে। এই মেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্য ঐতিহ্যবাহী মেলা। এই মেলায় শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা আসে।  এছাড়া মেলায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসে।’

মামুন আরও বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে আমাদের  শতাধিক লোক ভলানটিয়ার হিসেবে কাজ করছে। আমরা দোকানদার সার্বিক সহযোগিতা করছি।’  

গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঈদের মধ্যে জামাইয়েরা না  এলেও এই মেলাকে কেন্দ্র করে তারা শ্বশুর বাড়িতে চলে আসে। এই মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজনও আসে।’

ঢাকা বিজনেস/নোমান/ 



আরো পড়ুন