অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে তৈরি চড়ারহাট গণকবর। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিণত হয়েছে গো-চারণ ভূমিতে। এলাকাবাসী বলছে, শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলেও নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর, সাইন বোর্ড, প্রবেশদ্বার কিংবা আলোর ব্যবস্থা। তবে
নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বলছেন, ‘ইতোমধ্যে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও সংস্কার কাজ করার পরিকল্পনা আছে।’
শহীদ পরিবরের সদস্য মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ভোরে চড়ারহাট প্রাণকৃষ্ণপুর গ্রামের ৮০ থেকে ১০০ জন গ্রামবাসীকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে পাক বাহিনীর সদস্যরা। তারা আমার দাদা ও দাদার ভাইকে মেরে ফেলে ব্রাশ ফায়ার করে। চড়ারহাট এলাকায় শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করে হয়েছে শহীদ স্মুতিস্তম্ভ। কিন্তু অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে গণকবরগুলো।’ তিনি বলেন, ‘পরিণত হয়ে গো-চারণ ভূমিতে।’
বয়োবৃদ্ধ মো. আছির উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১০ অক্টোবর ভোরে পাকসেনারা গরুরগাড়ী যোগে ঘোড়াঘাট থেকে বিরামপুরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় প্রাণকৃষ্ণপুর, সরাইপাড়া, নয়াপাড়া, বেড়ামালিয়া, আহমেদনগর, নওদাপাড়া, শিবরামপুর, চৌঘরিয়া, আমতলা, চণ্ডীপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। ঘুমন্ত মানুষদের মাটি কাটার কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে আনে। পরে তাদের নওশাদ আলী মণ্ডলের জমিতে একত্রিত করে। এরপর পাক বাহিনীর সদস্যরা নিরীহ গ্রামবাসীকে সারিবদ্ধ দাঁড়ি করে দোয়া পড়তে বলে । দোয়া পড়া শেষ হতে না হতে পাকসেনারা ব্রাশ ফায়ার করে নীরিহ গ্রামবাসীর ওপর। এ সময় শহীদ হন ৮০ থেকে ১০০ জন। ভাগ্যক্রমে যারা বেঁচে যান, তাদেরও বন্দুকের বার্ট ও বুট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।’
আছির উদ্দিন আরও বলেন, ‘চলে যাওয়ার যাওয়ার সময় পাকসেনারা গ্রামগুলোতে আগুনও ধরিয়ে দেয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর সকালে গ্রামবাসী কাফনের কাপড় ছাড়াই চাদর, শাড়ি, জামা ও কাঁথা দিয়ে নিহতদের চড়ারহাট প্রাণকৃষ্ণপুর এলাকায় একেকটি কবরে ২-৩ জনকে দাফন করা দেয়।’
পুটিমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘শহীদদের স্মরণে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও সেক্টর কমান্ডার ফোরামের উদ্যোগে চড়ারহাট প্রাণকৃষ্ণপুরে ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘১৯৭১ সালে ওই এলাকার ৫ থেকে ৭ গ্রামের নিরীহ মানুষকে মাটিকাটার কথা বলে চড়ারহাটে একত্রিত করে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। সেই শহীদদের স্মরণে ইতোমধ্যে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু অংশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে। শহীদদের নামফলক তৈরি করা হয়েছে। আরও কিছুর কাজ করার পরিকল্পনা আছে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/