২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



সরিষা ক্ষেতে মৌ-বক্স, লাভের স্বপ্নে চাষিরা

আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল || ১২ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৭:৩১ এএম
সরিষা ক্ষেতে মৌ-বক্স, লাভের স্বপ্নে চাষিরা


টাঙ্গাইলে চলছে  সরিষা চাষ।  আর এই সরিষা ক্ষেতের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে মৌ বাক্স বসিয়েছেন চাষিরা। মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এসব মৌ বাক্সে জমা করছে। মৌ বাক্সে জমা করা মধু সংগ্রহ করতে মৌ চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষেতের পাশে স্থাপন করা হয়েছে সারি সারি মৌ বাক্স।  এসব বাক্স থেকে  মধু সংগ্রহ করছেন চাষিরা। আবার ক্ষেত থেকেই সরাসরি মধু বিক্রিও করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২ উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। জেলায় ৭৯ হাজার ৯৪১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮১ হাজার ৫৪০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ২৩ হাজার ৪২০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মৌ চাষের আওতায় জমি রয়েছে ১৮ হাজার ৮২ হেক্টর। মৌ স্থাপিত হয়েছে ৬ হাজার ৫৯৭টি। এখন পর্যন্ত মধু আহরণ হয়েছে ৫ হাজার ৯১৭ কেজি। জেলায় এ পর্যন্ত স্থানীয় ৩৪ জন ও অস্থায়ী মৌচাষি রয়েছে ৭৮ জন।

টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার গালা গ্রামে সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষের ১৩০ বাক্স বসিয়েছেন খলিল গাজী।  মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সোনাতলা এলাকা থেকে। তিনি বলেন, সরিষাক্ষেত থেকে মধু আহরণ করলে পরাগায়ন হয়। এতে উৎপাদন বাড়ে। তাই ক্ষেতের মালিকেরাও মৌচাষিদের উৎসাহিত করছেন। ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে মৌমাছির সাহায্যে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে।  আমি আশা করছি ৩০-৩৫ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবো। দেড় মাস এখানে থাকবো। দেড় মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হবে। সব খরচ বাদ দিয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ করার আশা করছি।’

এই মৌচাষি আরও বলেন, ‘মৌমাছির বাক্স বসালে ফলন ভালো হয়। তাই ক্ষেতের মালিকেরা বাক্স বসাতে সহায়তা করেন। চাকরির অবস্থা বর্তমানে ভালো না। তাই শিক্ষিত যুবকদের দিন দিন মৌ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।’

সদর উপজেলার গালা এলাকার জাহিদ মিয়া বলেন, ‘মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে দেওয়া প্রয়োজন। কারণ মধু সংরক্ষণ করতে পারলে মৌচাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।’

আল আমিন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘মৌ চাষে খরচ অনেক। বছরে ৭ মাস মধু হয় না। এ সময় মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি খাওয়াতে হয়। এ বছরে চিনির দামও বেশি। তাই লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক আগে থেকে মৌচাষ করছি। সরকার যদি সরাসরি মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে, তাহলে আমরা সঠিক দামটা পেতাম। এতে লাভ হতো বেশি।’

মৌ শ্রমিক চয়ন মিয়া বলেন, ‘এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। পরিবার থেকে খরচ দিতে পারে না। চিন্তা-ভাবনা করে দেখলাম একটা কিছু করতে হবে, সেজন্য মৌ বাক্সের কাজ শিখতে চলে এলাম। আমারও চিন্-তাভাবনা আছে নিজ উদ্যোগে মৌ বাক্স বসানোর।  কারণ বেকার বসে না থেকে কিছু একটা করা ভালো।’

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চফলন ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা নভেম্বরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে লাগে জাতভেদে ৭০-৯০ দিন।

কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর কৃষকরা সরিষার ভালো দাম পেয়েছিলেন। এতে লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও অধিক লাভের আশায় সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগেও অনেক কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন। 

ঢাকা অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, ‘মৌমাছি সরিষা ক্ষেতের ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। তাই ক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স বসালে সরিষার ফলন অন্তত ২০-২৫ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি চাষিরা মধু আহরণ করে লাভবান হন। সরিষা চাষিরা মধু সংগ্রহকারীদের বাধা না দিয়ে আরও সহযোগিতা করেন। নানাভাবে মধু সংগ্রহকারীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। 

ঢাকা বিজনেস/এনই/ 



আরো পড়ুন