গত কয়েক মাস পর কিছুটা হলেও বিদায়ী সপ্তাহে (৮ জানুয়ারি-১২ জানুয়ারি) দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনে ধারাবাহিকতা ফিরেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকার অঙ্কে এই লেনদেন ও মূল্যসূচকের উন্নতির ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, গত ১ আগস্ট ২০২২ তারিখে ডিএসই-এর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৫ হাজার ২৯ টাকা। আর ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে বাজার মূলধন এসে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬৯২ টাকা। প্রায় সাড়ে ৫ মাস পর বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৩ টাকা বা ৪৯ শতাংশ। গত ১ আগস্ট ২০২২ তারিখে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬১৬৪ পয়েন্ট; ১২ জানুয়ারি ২০২৩ এসে তা দাঁড়িয়েছে ৬২১৫ পয়েন্টে। এক্ষেত্রে প্রধান সূচক বেড়েছে ৫১ পয়েন্ট বা ০.৮২ শতাংশ।
এদিকে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ২ হাজার ১২১ কোটি ৪১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে; যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ১৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে ৯৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা ৮৭ শতাংশ বেড়েছে।
ডিএসই সূত্রমতে, লেনদেনের মতো মূল্যসূচকেও উন্নতি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২১ পয়েন্ট বা ০.৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২১৫ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট বা ০.৩২ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বা ০.২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৩৫৮ পয়েন্টে এবং ২১৯৯ পয়েন্টে।
আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রমতে, বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি ৬ লাখ টাকার। যার পরিমাণ আগের সপ্তাহে ছিল ৩৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার। সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪ পয়েন্ট বা ০.৩০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩৫৩ পয়েন্টে। সিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ৩৩ পয়েন্ট বা ০.৩০ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ২ পয়েন্ট বা ০.১৩ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ৫ পয়েন্ট বা ০.৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০৯৯৯ পয়েন্টে, ১৩২২ পয়েন্টে এবং ১১৫৮ পয়েন্টে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল হক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মার্কেট ৫ থেকে ৬ মাস খারাপ ছিল। অনেক ধরনের কারসাজির কারণে মার্কেট খারাপ ছিল। এই মার্কেট খারাপ হওয়ার পেছনে বড় প্লেয়ার থেকে শুরু করে তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেকাংশে দায়ী। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো মার্কেট ঠিক রাখতে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। আইসিবির কাজ হচ্ছে খারাপ মার্কেটকে সহায়তা করা, আর আপ মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করে মার্কেটকে ঠাণ্ডা রাখা। কিন্তু আইসিবি করে ঠিক তার উল্টো। গত ৫/৬ মাস মার্কেটকে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও গেম্বলাররা কারসাজি করে খারাপ পরিস্থিতিতে রেখেছিল। তবে, সব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত না।’
সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘এই মার্কেটে কোনো তারল্য সংকট নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে তারল্য সংকট সৃষ্টি করা হয়। বাজারটা এখন পজেটিভের দিকে যাচ্ছে। আগামীতে বর্তমান তলানী থেকে বাজার অনেক ওপরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন এই ব্যাপারে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়ায় দিতে হবে।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ধর্মই হলো আপ হলে একটা সময় পর ডাউনে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার ডাউনে থাকলে তা আবার আপে চলে যায়, পুঁজিবাজার এখন যে জায়গায় আসছে এখান থেকে নিচে যাওয়ার আর জায়গা নেই। এখন ওপরের দিকেই যাবে গ্রাজুয়েলি। বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন ও সূচক একটু একটু করে বেড়েছে। আগামী দিনেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আমাদের রিজার্ভ, ফরেন রেমিটেন্স, এক্সপোর্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলারের মানও একটা স্ট্যাবল জায়গায় এসেছে। এসব কারণেও মার্কেট ভালো হতে শুরু করেছে।’
ছায়েদুর রহমান আরও বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা করতে এসেছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য শেয়ার মার্কেটে আসেনি। তারা সবসময় চেষ্টা করে মার্কেট থেকে লাভবান হতে।’
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মার্কেট তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর থেকে নিচে যাওয়ার আর রাস্তা নেই। যে কারণে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে এই এক সপ্তাহের লেনদেন দেখে মার্কেট আগামীতে কেমন হবে তা বলা মুশকিল।’