২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



মিয়ানমার প্রতিনিধি-রোহিঙ্গা আলোচনার ফল কী

তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার || ০১ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:১১ পিএম
মিয়ানমার প্রতিনিধি-রোহিঙ্গা আলোচনার ফল কী


বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে তাদের মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দিনভর আলোচনা করেছেন মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই দিন শেষে ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারে ফিরে গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মিয়া মো. মাইনুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে। সরকার সবসময় রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। রোহিঙ্গারা যেন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রত্যাবাসন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটা চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেন রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যান।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এর আগে চলতি বছর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল দুই বার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিল। এ সময় মিয়ানমার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আজও তারা সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, কোন গ্রামে কে যাবে, কিভাবে যাবে। এই আলোচনাটা আমাদের সঙ্গে অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।’

তবে, রোহিঙ্গারা কখন স্বদেশে ফিরে যাবেন, সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন মাইনুল কবির। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশ থেকে যাওয়াই নয়, যাওয়ার পরও যেন তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন এবং প্রত্যাবাসনটাও যেন টেকসই ও স্থায়ী হয়, সে জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সংশয় ও অবিশ্বাস দূর করতে মিয়ানমারের সঙ্গে সবধরনের আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা।

এর আগে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টায় টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদীর জালিয়াপাড়া জেটিঘাট দিয়ে পৌঁছায় মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের এ প্রতিনিধি দলটি। এরপর বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নদী নিবাস রেস্ট হাউজ এবং গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউজে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমার ফিরে গেছে।

বুধবারও (১ নভেম্বর) রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি টেকনাফ আসবেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিধি দলটি দুদলে বিভক্ত হয়ে ১৮০ রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মূলত প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আদায়ে এই আলোচনা চলছে।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার জন্য আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলোচনার মধ্যদিয়ে নিজ ভিটেমাটি ও নাগরিকত্ব দিলেই স্বদেশে ফিরবেন তারা। আর দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে।’

শরণার্থী কমিশনার বলেন, ‘জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দুই দেশের চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। আমরা জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।  আশা করি, দুই পক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে। অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। যার জন্য আমরা প্রস্তুত।’

এর আগে চলতি বছর দুবার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। গত ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং গত ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। এরইমধ্যে গত ৫ মে বাংলাদেশের সাত সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।

/ঢাকা বিজনেস/এনই/




আরো পড়ুন