২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবন্দর মোংলার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে এই রেলপথের শত ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের খুঁটিনাটি কাজ। চলতি সপ্তাহেই এসব কাজও শেষ হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে অক্টোবরে শেষ সপ্তাহে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ট্রানজিট সুবিধার আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথের কাজ হাতে নেয় সরকার। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ ৩ ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ, মূল রেললাইন ও টেলিকমিউনিকেশন-সিগন্যালিং বসানো।
২০১১ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ করতে পারেন ঠিকাদার কোম্পানি। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দফায় সংশোধনের পর ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেইসঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণ কাজ করে। বাকি কাজ করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সে সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন, ‘মোংলা-খুলনা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে মোংলাবন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। মোংলা-খুলনা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। তেমনি নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোংলাবন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এতে গার্মেন্টস পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য কম খরচে মোংলা থেকে পরিবহন করা যাবে। রপ্তানিও করা যাবে।’
বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘রেললাইনটি ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে চিংড়ি ও গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন সহজ হবে।’
প্রকল্প পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি ও নানা কারণে কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে। দুই দফায় প্রকল্প সংশোধনের কারণে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। এবার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে দেখভালের কাজ।’
মোংলা-খুলনা রেলপথের শত ভাগ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে এই প্রকল্প-পরিচালক বলেন, ‘অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এই পথ দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। সেভাবে আমরা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/
