বিশ্বসেরা ১০ নারী বিজ্ঞানী
ইন্দ্রাণী ||
১০ জানুয়ারী, ২০২৩, ০২:০১ পিএম
বিজ্ঞানী বলতেই আমরা কল্পনা করি অগোছালো একজন প্রবীণ পুরুষের ছবি। আর ছোটবেলা থেকে বইয়ের পাতায় কেবলই নিউটন-আইনস্টানদের কথা। অথচ ইতিহাসের পাতায় চোখে পড়ে বিখ্যাত কিছু নারী বিজ্ঞানীর নাম। বিজ্ঞানের বিভিন্ন অংশে যাদের অবদান অসামান্য।
১. ম্যারি ক্যুরি (৭ নভেম্বর,১৮৬৭-৪ জুলাই, ১৯৩৪)
একবার পদার্থবিজ্ঞানে আর একবার রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান মাদাম ম্যারি ক্যুরি। দুটি বিভাগে নোবেল জিততে পারা প্রথম নারী তিনি। আবিষ্কার করেছেন পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম নামক দুটি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেন। উল্লেখ, রেডিয়ামের প্রভাবে রোগাক্রান্ত টিউমার সৃষ্টিকারী কোষ তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়।
২. মারিয়া গ্যোপের্ট-মায়ার (২৮ জুন,১৯০৬-২০ ফেব্রুয়ারি,১৯৭২) মারিয়া গ্যোপের্ট-মায়ার জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ১৯৬৩ সালে দ্বিতীয় নারী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে নিউক্লীয় শক্তিস্তরের গঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেছিলেন মারিয়া ও ইয়োহানেস।
৩.ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড (২৭ মে,১৯৫৯- ) ডনা থিও স্ট্রিকল্যান্ড একজন কানাডীয় পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি লেজার রশ্মির বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রণী। চাপার্ড পালস এমপ্লিফিকেশনের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য ২০১৮ সালে জেরার মুরুর সাথে যুগ্মভাবে তিনি নোবেল অর্জন করেন। লেজার রশ্মির পালসের দৈর্ঘ্য ছোট করে এনে এর শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলার কৌশল লেজার মাইক্রোমেশিন, লেজার সার্জারী, ভেষজবিদ্যা ও মৌলিক বিজ্ঞানের অধ্যয়নে ব্যবহৃত হয়।
তিনি ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিভাগ ও পদার্থবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক। মারি ক্যুরি ও মারিয়া গোপার্ট মায়ারের পরে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী তিনি তৃতীয় নারী।
৪. আইরিন জোলিও-ক্যুরি (১২ সেপ্টেম্বর,১৮৯৭-১০ মার্চ,১৯৫৬) আইরিন জোলিও-ক্যুরি ছিলেন বিখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী। এছাড়াও, তিনি মারিয়া স্ক্লদভ্স্কা ক্যুরি ও পিয়ের ক্যুরি দম্পতির কন্যা ও ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি'র স্ত্রী ছিলেন। তিনি ও তার স্বামী ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি যৌথভাবে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিস্কারের ফলে ১৯৩৫ সালে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিস্কারের দরুন তাদের এ মূল্যায়ন করা হয়। এরফলে স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে বোরন, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম সহযোগে আলফা উপাদান থেকে রেডিওআইসোটোপ তৈরি করা সম্ভবপর।
৫. ডরোথি ক্রোফুট হজকিন (১২ মে, ১৯১০-২৯ জুলাই,১৯৯৪ )
ডরোথি মেরি হজকিন একজন ব্রিটিশ রসায়নবিজ্ঞানী। শৈশব থেকেই ডরোথির রসায়নের প্রতি আগ্রহ ছিল এবং তার মা সকল বিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তিনি প্রোটিন কেলাসবিদ্যার উন্নয়নের জন্য ১৯৬৪ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
৬.গার্টি কোরি (১৫ আগস্ট,১৮৯৬-২৬ অক্টোবর,১৯৫৭) পুরো নাম গার্টি থেরিসা কোরি। চেক রিপাবলিকে জন্ম নেওয়া অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান বায়োকেমিস্ট। শরীর কিভাবে শক্তিকে ব্যবহার করে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। ‘কোরি সাইকেল’ নামে মেটাবোলিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আবিষ্কার করেন। ১৯৪৭ সালে প্রথমবারের মতো চিকিৎসায় তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। চিকিৎসা শাস্ত্রে নারীদের মধ্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী তিনি।
৭.রোজালিন ইয়ালো (১৯ জুলাই, ১৯২১-৩০ মে,২০১১) রোজালিন সাসম্যান ইয়ালো মার্কিন চিকিৎসা পদার্থবিদ। রেডিওইমিউনোঅ্যাসে বা রেডিও প্রতিরোধ পরীক্ষা (আরআইএ) পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য যৌথভাবে ১৯৭৭ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীদের তালিকায় তিনি ছিলেন নারীদের মধ্যে দ্বিতীয়। আর মার্কিন বংশোদ্ভূত প্রথম নারী।
৮.এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন (২৬ নভেম্বর, ১৯৪৮- )
২০০৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন অস্ট্রেলীয় বংশদ্ভূত মার্কিন গবেষক এলিজাবেথ হেলেন ব্ল্যাকবার্ন। জীবের ক্রোমজোমের টেলোমারে সম্পর্কিত গবেষণা করেন তিনি। যৌথভাবে টেলোমারেজ এনজাইম আবিস্কারের জন্য তিনি বিশ্বের মর্যাদাবান এ পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবরসায়নের উপর কাজ করছেন।
৯.ইউইউ তু (৩০ ডিসেম্বর ১৯৩০- ) চীনের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতির একজন প্র্যাক্টিশনার তিনি। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যুগান্তকারী ভূমিকার জন্য এই নারী চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ইউ ইউ তু ২০১৫ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জয় করেন।
১০. মে-ব্রিট মোজের (৪ জানুয়ারি, ১৯৬৩- ) মে-ব্রিট মোজের নওরোজিয়ান মনোবিজ্ঞানী ও স্নায়ুবিজ্ঞানী। তিনি ট্রনদেম, নরেওয়ের নওরোজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এনটিএনইউ) কাভলি ইন্সটিটিউট ফর সিস্টেমস নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড সেন্টার ফর দ্য বায়োলজি অব মেমোরি প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। মে-ব্রিট মোজের ব্রেইন'স মেকানিজম ফর রিপ্রেজেন্টিং স্পেস বিষয়ে শীর্ষ গবেষক। ২০১৪ সালে মে ব্রিট মোজের চিকিৎসাবিজ্ঞান এ নোবেল পুরস্কার পান। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য মস্তিষ্কের যে কোষ সংরক্ষণ করে তার পরিচয় সারা দুনিয়ার কাছে তুলে ধরেছেন এ চিকিৎসাবিজ্ঞানী।
শেয়ার করুন