১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার



যন্ত্রযানে হুমকির মুখে টাঙ্গুয়ার হাওর

তানভীর আহমেদ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) || ২৪ জুলাই, ২০২৩, ০৬:৩৭ এএম
যন্ত্রযানে হুমকির মুখে টাঙ্গুয়ার হাওর


মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটক। সঙ্গে যন্ত্রযান বা নৌযানও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পর্যটন বাড়ার সংবাদ ইতিবাচক হলেও এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাওরের গাছ, মাছ ও পাখির বাস্তুসংস্থান। স্থানীয়রা বলছেন, একে ইকো-ট্যুরিজম জোন হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান বা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পর্যটক বাড়ায় যন্ত্রযানও বাড়ছে। কিন্তু এসব যানের কোনো নির্ধারিত রুট বা পথ নেই। হাওরে প্রবেশ করার পর কোথায় গিয়ে এগুলো থামবে, কোন পথ দিয়ে যাবে, সেটি চিহ্নিত করে দিতে হবে। নাহলে যন্ত্রযানের তাণ্ডবে প্রকৃতি-পরিবেশ বিপন্ন হতে পারে। ইতোমধ্যে হাওরে আগের মতো মাছ নেই, পাখি নেই এমনকি সবুজ প্রকৃতিও দিন দিন বিবর্ণ রূপ ধারণ করছে। 

রাজধানী ঢাকার হাউস বোট চন্দ্রাবতী ও রূপকথার মালিক ইখতিয়ার হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে এখন ৭৫টি হাউস বোট এবং ২০০ ট্রাডিশনাল বোট পর্যটক বহন করছে। সব মিলিয়ে যন্ত্রযান প্রায় ৪০০ হবে। এই নৌ-যানগুলোতে চলাচলের পথ নির্ধারণ করে দিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই। প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই পর্যটক বহন করতে হবে সবাইকে।’


টাঙ্গুয়ার হাওরে দীর্ঘদিন কাজ করছেন উন্নয়ন কর্মী এহিয়া সাজ্জাদ। তিনি বললেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে সুরমা, বৌলাই, পাটলাই নদী হয়ে টাঙ্গুয়ার পাড়ের গোলাভারীতে এসে থামবে পর্যটকবাহী নৌযান। মধ্যনগর থেকে বংশিকুন্ডা বাজার বা চাপাইতি এসে থামতে হবে ইঞ্জিনচালিত নৌ-যানগুলোকে। ওখানে থাকবে পর্যটকদের বহন উপযোগী হাতেচালিত নৌকা। এগুলো দিয়েই হাওরে ঘুরতে হবে পর্যটকদের। অনেক সময় সুনামগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলে ডাম্পের বাজার, নতুন বাজার বা শ্রীপুর পর্যন্ত গিয়ে পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মন্দিহাতা বা গোলাভারী দিয়ে হাওরে ঢোকেন। এটিও বন্ধ করতে হবে। ওখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা না নিয়ে হাতেচালিত নৌকায় যেতে হবে হাওরে। তাহিরপুর থেকে পাঠাবুকা হয়ে গোলাভারীতে পৌঁছাতে হবে। পরে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঢুকতে হবে হাতে বাওয়া নৌকায়।’

টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের জয়পুরের বাসিন্দা সৈয়দ নূর বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের গাছ, মাছ ও পাখি বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাওরের নানা পথ দিয়ে শত শত ইঞ্জিনচালিত ট্রলার এমনকি হাউস বোট মধ্যনগর দিয়ে ঢুকে জয়পুর পর্যন্ত আসে। আবার জয়পুরের দিকে ঢুকে মধ্যনগর পর্যন্ত যায়। ট্রলার-বোটের এমন এলোপাথাড়ি চলাচল না ঠেকালে হাওরের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হবে।’

সুনামগঞ্জ ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে উত্তর শ্রীপুরে বা শ্রীপুর বাজারে, তাহিরপুর থেকে গোলাভারী, মধ্যনগর থেকে বংশিকুন্ডা পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত নৌ-যান চলার অনুমতি থাকতে হবে। এরপরই হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতরে ঢুকতে হবে। যেখানে পর্যটকবাহী ট্রলার বা হাউস বোট থামবে, একসময় এর আশপাশের গ্রামে ছোট ছোট ইকো রিসোর্ট গড়ে ওঠবে। ওখান থেকে হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতর পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থাও একসময় গড়ে ওঠবে। তাতে কর্মসংস্থান বাড়বে স্থানীয় লোকজনের।’


সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরশাদুল হক বলেন, ‘পর্যটকদের ভ্রমণ জরুরি কিছু নয়। মানুষের চলাচল ঠিক রেখে পাখি কিংবা মাছের অভয়াশ্রম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করে দিতে হবে।’

তিনি জানান, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণপাড়া ও চেরাদিয়ায় প্রবাল বেশি থাকে, এজন্য ওখানে পর্যটকদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের ক্ষেত্রেও একইভাবে পর্যটকদের ভ্রমণক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্রের ক্ষতি হয় এমন পথ দিয়ে নৌ-যান চলতে পারবে না। আমরা সেই নীতিমালা তৈরির কাজ করছি।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন