২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

তুমি নিজেই দারুণ নগর

রকিবুল হাসান || ২৬ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৩:৩১ পিএম
তুমি নিজেই দারুণ নগর


এত সুন্দর তুমি
সহজেই তো হত্যা করতে পারো দুপুর বিকেল যখন ইচ্ছে 
আমিও তো বুক পেতে বসে থাকি 
সুন্দর একটা খুন হবো বলে; 
তুমি ভালোবাসার সুঘ্রাণ পাপড়ি দিয়েছ 
ওগুলো শাণিত ছুরি—এখন বুঝতে পারি সহজেই; 
তুমি সহজেই কত আরাম আয়েশে দারুণ খুনের প্লানে 
চুমুতে বিষাক্ত বিষ ঢেলে দাও! 

আমি তো সরল বিশ্বাসে আমার সবুজ জমিন বুক
মিহিন ঠোঁটের পলিমাটি পবিত্রতা  
নিখাদ নিশ্বাস নদীর কাঁপুনি দিয়েছি তোমাকে; 
সেখানে তোমার ইচ্ছেরা শাণিত ফলায় চাষ করে যৌবনা জমিন;

এর থেকে বেশি প্রেম জানিনি কখনো—চাইওনি,
সেখানে পাতক তুমি—খুনের চুম্বনে গোলাপের গল্প কর। 

তুমি খুব সহজেই তো হত্যা করতে পারো 
দুপুর বিকেল নিশুতি যখন ইচ্ছে; 
খুন হবো বলে বুক পেতে বসে আছি নিখাদ মাটিতে। 
ভালোবাসলেই খুন হতে হয় প্রতিটি নিশ্বাসে প্রতিটি চুম্বনে 
এত সুন্দর যে তুমি বুঝিনি কখনো চমৎকার প্রাণঘাতী! 

তুমি নিজেই দারুণ নগর 
শৈশবের সবুজ মাঠের আলপনা আঁকা ছবিতে তোমার 
মাঠের পর মাঠ দোল-খাওয়া রূপশ্রী বেণী 
দুলছে যৌবনা স্বপ্নমৌতাত প্রেম; 
বাতাসে কী এক মায়াময় মাদকতা ঢেউ খেলে 
ভেসে যায় হৃৎকম্পন নগরের অলিগলি
জীবনের গান আনন্দ বেদনা নিজের ভেতর নিজেরই লুকানো
উচ্ছ্বল মায়াবী চোখে সবই ঢেকে যায় কলাপাতা দুঃখে।

ভাঙা ভাঙা কাশফুল মেঘ নুয়ে পড়ে তোমার ছবিতে 
সুন্দরের স্নিগ্ধস্পর্শ পেতে কপালের লাল টিপ
তোমার দীঘল খোলাচুল মুখভরা মায়াবী হাসিতে; 
ঝড়ের বৈশাখ আছড়ে যে পড়ে 
শরমের ভাঁজ ভেঙে  
তোমাকে চেয়েছে দেউলে তো আলোকরশ্মির গতিতে। 

তুমি তো দূরের গহনে কবিতায় ধ্যানে ধ্যানী—তোমার ছবিতে
শাড়িতে জড়ানো পলিমাটি তনুশ্রী শরীর  
কবিতার অধিক কবিতা—নিশুতিকা প্রার্থনায় 
ব্যাকুল পিপাসা—পিয়ানোতে বুঁদ হয়ে আছে যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়
নিদ্রাহীন চোখ—তোমার ছবি তো ছবি নয়
ভালোবেসেছ যে তুমি দূরের দোয়েল;
তোমার চোখের ভাষা সে কথা বলেছে সরল রাত্রিতে। 

তুমি নিজেই দারুণ নগর হয়ে উঠেছ ছবিতে
ঝড়ের রাত্রিতে ভাঙছে শহর গ্রাম মন-মন্দির প্রাসাদ 
তোমার চোখের গহনে তৃষ্ণার নদী কথা কয়
জেগে থাকে মুগ্ধতায় কবিতার শব্দ বর্ণ—
ধরা যায় না কিছুতেই; 
ছবি হয়ে ভেসে এলে ঢেউআঁকা যৌবনা দুপুরে  
ছবিগুলোর ভেতর থেকে জেগে মানবী শরীর
কেউ দেখেনি কখনো সেই প্রাণ উচ্ছ্বল তরুণী
পুষ্পিত হৃদয়ে কীভাবে দিয়েছে মোহনার গান জীবনতরীতে।

 কত নদী কত বাঁক শেষে অবশেষে
খরায় পোড়া পিপাসায় বৃষ্টি ও বন্যা আসে
প্রাণের গভীর আকুতি পেয়েছে জীবন এমন সুন্দর ছবিতে 
বিরান জমিনে জমে পলিমাটি উর্বরতা 
বুক বাঁধে কৃষাণী নতুন প্রেমে—ঘর ভরে যাবে সুখের ফসলে। 
সুন্দর অচেনা কালের ভেলায়—চেনা অচেনায় 
বসতি জনমভর—সুন্দরেরা কী এমনই!

চিরকালের অধরা নদীর গহীন গভীর কান্না
বলেছি তোমাকে দীর্ঘরাতে;
এইসব কথা লেখা আছে আঁকা আছে মরমি কবির ছবিতে।  

ভালোবাসার আকাশ
প্রত্যেকটি নিশ্বাস আমার স্পর্শ করে দেখলাম আমি 
সেখানে আশ্চর্যরকমভাবে লেখা আছে তোমার নাম,
প্রতিটি নিশ্বাস একটু একটু করে সাজিয়ে দেখলাম 
অবিশ্বাস্যরকম তার ভেতর থেকে জেগে উঠলে তুমি।

বিশাল আকাশবৃত্তে ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে দেখি 
আমার ভেতরে আমি নেই—জেগে আছে আমার পুরোটা 
অন্য কেউ—অবিকল তোমার মতোই—নিশ্চিত তুমিই 
তোমার নাম কী—আমি তা-ও জানি—তুমি দেবতী

আমি দু’হাঁটুর ভেতর নিজেকে লুকাই—মুখ গুঁজে ভাবি 
জীবনখাতায় কত হিসেব জড়ানো থাকে রহস্যের জালে! 
তোমার বুকের গোপন আগুনে জ্বলে আমার চোখের চুরুট 
কপালে আমার মায়াবী চাঁদ যেন তোমার চুম্বনকুসুম।

জেগে থাকি আমি—তোমার পবিত্র স্পর্শে; 
কী যে আদরলতায় জড়িয়ে বললে—কেন পোড়! 
কেন পোড়াও এভাবে আমাকে!
আমিও তো নেই ভেতরে আমার
ভুল হিসাব কখন কিভাবে যে জীবনের
অধিক হিসেব হয়ে যায়
ভালোবাসার আকাশ বোধহয় এরকমই

রক্তাক্ত কবিতা
কিভাবে ঘুমাই—ঘুম আসে না কিছুতেই—মরণ চিৎকারে জেগে উঠি—
কী অদ্ভুত নীরবতা—নীলবিষে আমি মরে যেতে থাকি 
অন্ধকার থেকে ছুটে আসা নাগিনী নিশ্চিন্ত দংশন শেষে চলে যায় 
হাওয়ায় মিশে—সক্রেটিস আমার শরীরে কি সেই 
হেমলক পয়জন—সত্যসাধক নিকোলাই কোপার্নিকাস আমি তো তোমার
উত্তরসূরি— ফুটন্ত তেলের কড়াইয়েও যদি মরি জর্দানো ব্রুনোর মতো
তবু আমি বলে যাব একমুঠো আলোর গল্প—বেদনা অগ্নিতে ঘুমহীন
আমি কিছুতেই ফিরব না সত্যভাষণ থেকে—হাইপোশিয়ার মতো 
টুকরো টুকরো করে যদি আমাকে ছড়ানো হয় রাজপথে—তবুও না—

কিভাবে ঘুমাই—নৃশংস ফণা তুলে দংশন করে বিষধর অন্ধকার
আমার চেতনা রক্তাক্ত হয় রাজপথে—আলোর পাখিরা কবে থেকেছে
আঁধারে গুহাবন্দি—কবে গুনেছে জীবনের দাম—গ্যালিলিও রাসেল
আইনস্টাইন আলি দস্তি নিজেরও উড়েছে নতুন পালকে
আঁধার তাড়াবে বলে—একদিন নষ্টরা দখল করে নেবে সব—এ সত্য 
ঝরনা হয়ে উঠতেই হুমায়ুন আজাদের বুকের রক্তে ডোবে দুখিনী বাংলা 

আমি ঘুমোতে পারি না অভিজিৎ—ঘুমোতে পারি না
আমি যেন গোঙানির শব্দে এপাশ ওপাশ করছি—
দীপনের রক্তাক্ত শরীর ঘুমোতে দেয় না—যেন রক্তাক্ত পোস্টার
বাংলাদেশের হৃদপিণ্ডে—আমার শরীরে নষ্টদের নীলবিষ দংশন—
তবুও আমি বলব আমার সত্যভাষণ—দাঁড়িয়েছি মৃত্যুমঞ্চে—আলোর মিছিলে

রবীন্দ্রনাথের নায়িকা
মধ্যরাত ভেঙে আমার মৃত্তিকা— বুনে দিল  দু’চোখে আমার 
                       সরিষা ফুলের মতো হলুদ বিস্ময়
আমি তাকে দেখি— সারা ঘর দেখি— যেন সারা ঘর রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের নায়িকা হয়ে অপূর্ব সজ্জিতা মৃত্তিকা শরীর

কবিতার মতো করে ঘরভর্তি রবীন্দ্রনাথের ছবি
কী অদ্ভুত সুন্দর করে ফুলেল পাপড়ির মতো সাজানো স্বর্ণ-কর্ম
লাউডগা শরীরের মোমবাতির মায়াবী আলোতে কী ভীষণ 
                                           উজ্জ্বল রবীন্দ্রনাথ
মৃত্তিকা তাঁর বুকের সাথে মুখ লুকিয়ে খুব শান্তি করে
খুব বড়ো করে নিশ্বাস নেয় যেন সমুদ্র শীতল হয়ে ওঠে
                                            জন্মান্তরের তৃষ্ণা 
মধ্যরাত রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠে— কী যে মুগ্ধ আলোতে ডুবে যায়
রাতের আঁধার— মৃত্তিকা আর মৃত্তিকা থাকে না

রবীন্দ্রনাথের ভেতর কীভাবে যেন সে সূর্য ডোবার মতো ডুবে যায়
আমি তাকে কিছুতেই পাই না— সে শুধুই রবীন্দ্রনাথের নায়িকা
আমি দেখি গভীর বিস্ময়ে রবীন্দ্রনাথ এখনো কী দুর্দান্ত যুবক

অন্ধকার ভেঙে এখনো সে প্রতিদিন দুপুরের রোদের মতো উজ্জ্বল
মৃত্তিকা কী অপার আনন্দে প্রতিটি নিশ্বাসে রবীন্দ্রনাথের...



আরো পড়ুন