টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার যাদুকাটা, চেলা, সুরমাসহ সব নদ-নদী ও হাওরে পানি আবারও বেড়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে বাড়ি থেকে কর্মস্থল ফেরত মানুষসহ এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার সুরমা নদীর পানি ষোলগর পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, রোববার (২ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্তকতা অবলম্বন করার নিদের্শনা দিয়েছেন। এসময় পুলিশ সুপার,বিজিবি,র্যাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের কাজির পয়েন্ট, জামাইপাড়া, নতুন পাড়া, কালিবাড়ি, আরপিননগরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও, জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ডুকে প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট।
উপজেলা ও সীমান্ত এলাকার সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের নিম্নাঞ্চলের পাঁচটি উপজেলার রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। একইসঙ্গে পানি বাড়তে থাকায় বন্যা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ভাটির জেলার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।
জেলা শহরে যাতায়াতে কোনো কোনো সড়কে মানুষ নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়ায় জেলার হাওর পাড়ে ও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী কয়েক লাখ মানুষ বন্যার আশঙ্কার মধ্যে সময় পার করছেন। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদি বন্যা সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
মধ্যনগর উপজেলার মহেষখলা গ্রামের বাসিন্দা অজিত কুমার বলেন, ‘মেঘালয় পাহাড়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঢলের পানি মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার সড়ক উপচে পানি হাওর এলাকায় প্রবেশ করছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে বন্যা আতঙ্কে আছি।’
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের (সীমান্ত এলাকার) বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের পানিতে বড়ছড়া বাগলী সড়কের কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও, এই সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। পানি সীমান্ত এলাকায় বাড়ছে।’
জরুরি প্রয়োজনে তাহিরপুর উপজেলা থেকে জেলা শহরে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জেলা শহরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলাসহ কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও, জেলার হাওর পাড়ের সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে ভেঙে জেলা শহরে পৌঁছাতে হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আরও বাড়তে থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যা হতে পারে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কমে যাবে।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিলে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা মজুদ রয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
জাহাঙ্গীর/এইচ