রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (রসিক) বড় ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হলেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে ২২৯টির কেন্দ্রের (সবগুলোর) ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৯৬ হাজার ৯০৬ ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়রের আসনে বসছেন মোস্তফা।
ফলাফলে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট ভোটের চেয়ে প্রায় ১৩ হাজার ৬৬০ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মোস্তফা।
লাঙ্গল প্রতীকের মোস্তাফিজার রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী (হাতপাখা প্রতীক) আমিরুজ্জামান। তিনি পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) লতিফুর রহমান ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা (ডালিয়া) ২২ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান পেয়েছেন ৫ হাজার ১৩৮ ভোট, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন ৫ হাজার ৮০৯ ভোট, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু ২ হাজার ৮৬৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ২ হাজার ৬৭৯ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২, আর বাতিল ভোটের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬টি। মোট বৈধ ভোট ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬, যা মোট ভোটের ৬৫.৮৮ শতাংশ। গতকাল শেষ হওয়া নির্বাচনের ফলাফল কী হবে এ নিয়ে নগরবসীর কোনো কৌতূহল না থাকলেও সবাই অপেক্ষায় ছিলেন প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট নিয়ে। সবার আগ্রহের বিষয় জাপা প্রার্থী মোস্তফার সঙ্গে দ্বিতীয় অবস্থানে কে থাকবে এবং তার প্রাপ্ত ভোট কত হবে।
ফলাফলে জয়ী প্রার্থী ছাড়া অংশ নেওয়া অন্য ৮জন প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৮ আর জয়ী মোস্তাফিার রহমান মোস্তাফা পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। জানা যায়, তৃতীয় নির্বাচনে এবার ভোটার ছিল ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন। ২২৯টি কেন্দ্রে বুথ সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৯টি। সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
বিজয়ী হওয়ার পর মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ভোট নিয়ে আমাদের কোনো শঙ্কা ছিল না। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করতে আসলে যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। নির্বাচন কমিশন একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আমরা সেই নিরিখে আস্থা রেখে নির্বাচন করছি। আমরা মনে করি এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’
মেয়র পদে ৯ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ও মেহেদী হাসান বনি।
২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হয়। তখন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা হাঁস প্রতীকে পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। আর মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তখন মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন।
দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট।
ঢাকা বিজনেস/এম