০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার



কৃষকরা কেন সরকারি দামে ধান বিক্রি করতে চান না

তানভীর আহমেদ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) || ২৩ মে, ২০২৩, ১১:৩৫ এএম
কৃষকরা কেন সরকারি দামে ধান বিক্রি করতে চান না


সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে পাইকারদের কাছে ধান বিক্রিতে ঝুঁকি কম বলে মনে করেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কৃষকেরা। তারা বলছেন, পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করলে একদিকে সরকারি দামের চেয়ে বেশি মূল্য পাওয়া যায়, অন্যদিকে পরিবহণব্যয় ও শ্রমিক খরচও বাঁচে। কিন্তু সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে একদিকে দাম কম, অন্যদিকে পরিবহণব্যয় ও শ্রমিক খরচ; দুটোই কৃষকদের বহন করতে হয়। তাই তারা সরকারি গুদামে ধান না দিয়ে খোলাবাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। 

কৃষক সাইদুল ইসলাম এই বছর ২৫ কিয়ার (প্রতি কিয়ার ৩০ শতক) জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। চাষের জমি থেকে  মোট  ৪৭৫ মণ ধান পেয়েছেন। ইতোমধ্যে খোলা বাজারে ১ হাজার ১৭০ টাকা দরে ১১০ মণ ধান পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। সরকারি গুদামে ধান দিতে খুব ঝামেলা হয়। স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা নেই। তাছাড়া বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে তার কোনো আগ্রহ নেই।

সাইদুল ইসলামের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে। শুধু তিনি নন তার মতো অনেক কৃষক সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আবার অনেক কৃষক মনে করেন গুদামে ধান দেওয়া মানে এটি একটি বাড়তি ঝামেলা।

শনির হাওরের কৃষক লিমন মিয়া বলেন, ‘সরকার ধানের যে দাম নির্ধারণ করেছে,  সেই দামে ধান বাড়িতেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করা যায়। তাদের কাছে বিক্রি করলে লেবার খরচ, পরিবহণ খরচ কিছুই লাগে না। একদম বাড়ি থেকে তারা ধান কিনে নেন। এছাড়া তারা ধানের আর্দ্রতা মাপেন না। গুদামে নিলেই তারা ধানের আর্দ্রতা ১৩ শতাংশের কম হলে হলে ধান নেয় না। এজন্যই পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করি।’

তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, ‘কৃষকের অ্যাপর  মাধ্যমে আবেদনকারীদের মধ্যে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে চলতি মে মাসের ১৭ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এবছর ১ হাজার ২৯২ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে। সরকার কর্তৃক প্রতি কেজি ধানের মূল্য ৩০ টাকা ও ১ হাজার ২০০ টাকা ধানের মণ নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের পরবর্তী চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে তা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে।’

সূত্র জানায়, কৃষকদের জনপ্রতি ১টি করে কৃষি কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় এবং তার চাষ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ থাকে। কার্ডধারী কৃষকদের সোনালি ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে। গুদামে ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়া হয়। কৃষক ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলেন। ধানের বর্তমান বাজারদর ও সরকার–নির্ধারিত দাম কাছাকাছি।  ক্ষেত্রবিশেষে বেশি হওয়ায় কৃষকেরা গুদামে ধান দেওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে চান না।

তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বিএম মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘অ্যাপসে নিবন্ধনের মাধ্যমে লটারিতে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এ বছর পুরো উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ২৯২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে।’

উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এরমধ্যে চার লাখ টন ধান সংগ্রহ করা হবে। সরকার কর্তৃক প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। প্রতি মন (৪০ কেজি) ১২শ টাকা।

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন