২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

হাইব্রিড সভায় বাঁচবে সময়, কমবে খরচ

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৭ মে, ২০২৩, ০৯:৩৫ এএম
হাইব্রিড সভায় বাঁচবে সময়, কমবে খরচ


আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া হাইব্রিড পদ্ধতির সভার পরামর্শকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ-ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এর প্রভাবে ডলার সংকটের কারণে দেশ বিদ্যুৎ-গ্যাস আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচ বাঁচাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভার  পরামর্শ সময়োপযোগী। এই পদ্ধতিতে যাদের উপস্থিতি অপরিহার্য কেবল, তারা শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকবেন, বাকিরা ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। ফলে যাতায়াত-ব্যয় থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়ার খরচও সাশ্রয় হবে। ফলে সময়ও বাঁচবে। 

প্রসঙ্গত,  যেসব সভায় শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজন নেই, সেই সভা হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানের জন্য চলতি বছরের ২৬  এপ্রিল ব্যাংকগুলোকে এবং ১৫ মে আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, শতভাগ শারীরিক উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হলে সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে  থেকে পরিচালকদের আসতে হয়। এতে তাদের পরিবহন খরচ, হোটেল খরচসহ বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত ব্যয়নির্বাহ করতে হয় কোম্পানিগুলোকে। শারীরিক উপস্থিতিতে এজিএম হলে সেখানেও পরিচালকদের  সশরীরে হাজির হতে হয়। এমনকি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও সশরীরে হাজির হন। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও পরিবহন খরচসহ নানারকম খরচ বহন করতে হয়। শুধু তাই নয়, এ ধরনের এজিএমে সাধারণত হল ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ  আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হয় কোম্পানিগুলোকে।  

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে করোনার সময়ে অনলাইনে পর্ষদ সভাসহ বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) মতো গুরুত্বপূর্ণ সভা আয়োজন করার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ব্যবসা উন্নয়ন শীর্ষক ও শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনের মতো অনেক কর্মিসভা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেকক্ষেত্রে এসব সভা তিন থেকে পাঁচ দিনের মতো সময় নিয়েও চলছে। বিশাল এ ব্যয়ের জোগান দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল থেকে। যার ফলে পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর টার্নওভারসহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  

ইউনিয়ন ব্যাংকের কোম্পানি সচিব আলী হোসেন ভুঁইয়া ঢাকা বিজনেসকে বলেন,‘ব্যাংকগুলোর সভা শতভাগ শারীরিক উপস্থিতিতে হলে সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিচালকদের  আসতে হয়। এমনকি অনেক ব্যাংক রয়েছে, যাদের পরিচালকরা দেশের বাইরে থাকেন। তাদেরও সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। এর ফলে পরিবহন, বিমান ভাড়া, হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক অনেক খরচ বহন করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। যা পরবর্তী সময়ে তাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ে। সময়ের অপচয়ও হয় অনেক। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভা করার যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’

আলী হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘হাইব্রিড পদ্ধতিতে মূলত কিছু অংশ সভায় শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হয়।  অন্যদের ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হতে হয়। এখন যাদের শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে হলে পরিবহন খরচসহ যাবতীয় খরচ কোম্পানিকে বহন করতে হবে; এমন পরিস্থিতিতে হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভা হলে তারা সশরীরে হাজির না হয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি অনলাইনে যুক্ত হয়ে সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন। প্রকাশ করতে পারবেন তাদের অভিমত। এতে করে কোম্পানি সভা করা বাবদ কনফারেন্স রুম ভাড়া ও পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ বহন করা থেকে বেঁচে যাবেন।’

ইউনিয়ন ব্যাংকের কোম্পানি সচিব আর বলেন, ‘তবে হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভা হলে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। হাইব্রিড সভায় অংশগ্রহণকারী সবাই মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না। এছাড়া হাইব্রিড পদ্ধতিতে আর কোনো সমস্যা নেই। বরং উপকার।’

বাংলাদেশ ফিন্যান্স লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মুনসি আবু নাইম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘শতভাগ শারীরিক উপস্থিতিতে যেকোনো সভা করতে হলে অতিথিদের জন্য একটা এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা করতে হয়। পাশাপাশি তাদের ওয়ার্কিং ফাইল বা হার্ড ফাইল সরবরাহ করতে হয়। পাশাপাশি অন্যান্য খরচ তো আছেই। শুধু যে অর্থ খরচ তা নয়, ঢাকার এক জায়গায় সভার আয়োজন করা হলে সেখানে পরিচালকসহ কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত হতে হলে ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলে আসতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়।’তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত শারীরিক উপস্থিতিতে সভাগুলোতে হট্টগোল হয়ে থাকে। যে সব সাধারণ বিনিয়োগকারী আসেন, তাদের একটা অংশ উপযুক্ত প্রশ্ন না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রশ্ন করে কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে বিব্রত করে থাকে। তাই আমার মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভা পরিচালনা করার নির্দেশনা সময়োপযোগী।’

বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কোম্পানি সচিব শারমিন আক্তার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সব প্রতিষ্ঠানেরই শতভাগ শারীরিক উপস্থিতিতে সভায় অনেক বেশি খরচ হয়। হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত সভায় তুলনামূলক কম খরচ হয়।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক সারওয়ার হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভার সুবিধা অনেক। এখন যদি মতিঝিলে কোনো প্রতিষ্ঠানের সভা হয়, সেক্ষেত্রে যারা মতিঝিলে অবস্থান করছেন, তারা সশরীরে সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন সহজে। আর যারা নারায়ণগঞ্জ বা উত্তরাসহ বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছেন, তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হতে পারবেন। এর ফলে তাদের সময়ের অপচয় রোধ হলো। আর পরিবহন খরচ ও গাড়ির তেলও বেঁচে গেলো। এছাড়া, আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সশরীরে উপস্থিত সভার চেয়ে হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন