২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

সেই ২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ৩০ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৩ পিএম
সেই ২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি


পুঁজিবাজারের দুই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।  ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) নামের একটি সম্পদ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের ঘটনায় এই ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানিটির নিরীক্ষকের ভূমিকায় ছিল আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং এবং রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোং। ফলে কোম্পানিটির অর্থ আত্মসাতের দায় নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান দুটি এড়াতে পারে না। 

ইতোমধ্যে নিরীক্ষা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে কবে নাগাদ এই চিঠি দেবে, সে ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেনি কমিশন।

বিএসইসি সূত্র বলছে, ইউএফএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর কোম্পানির পরিচালিত ৪টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে পর্যায়ক্রমে এই টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন। বিএসইসির এক তদন্তে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনায় ফান্ডগুলোর নিরীক্ষকের যোগসাজশ ও দায়িত্বে অবহেলার তথ্য পেয়েছে কমিশন। এ ঘটনায় ইউএফএস এমডির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। 

এফআরসিতে বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আলোচিত দুই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের পার্টনারদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠান (ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ইত্যাদি)-এর নিরীক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোং-এর আইনজীবী এ.কে চৌধুরী পাভেল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কমিশনের আনা অভিযোগ নিয়ে কাজ করছি। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আছি।’

রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোং-এর এক কর্মকর্তা মো. মফিজুল হক রিংকু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্রসিডিউর অনুযায়ী আমরা কোম্পানিটির ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেখেছি। সে অনুযায়ী আমরা সার্টিফায়েড করেছি। নিরীক্ষকের কাজ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অডিট করা। যাচাই-বাছাই করা না। তারপরও আমরা তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের কিছু স্টেটমেন্ট চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সেই স্টেটমেন্টগুলো দেয়নি। তারা না দিলে আমরা কী করবো।’

ইউএফএস যদি অডিট করার জন্য আপনাদের ঠিকভাবে কাগজ না দেয়, তাহলে আপনারা কাগজপত্র না দেখেই কোম্পানিটির ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সার্টিফায়েড করে দেবেন?’ এমন প্রশ্নে মো. মফিজুল হক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকের আহমেদ (এফসিএ) ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কোম্পানি থেকে আমাদের ফলস ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দিয়েছিল সার্টিফায়েড করার জন্য। আমরা সেসব ফলস কাগজপত্র দেখে নিরীক্ষক হিসেবে সার্টিফায়েড করেছি।’

‘আপনারা কেন কাগজপত্র ঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে সার্টিফাইড করলেন না?’ এমন প্রশ্নে জাকের আহমেদ বলেন ‘কমিশন আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। কমিশন যদি মনে করে আমাদের বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্তা নেবে, তো নিতে পারে।’

এদিকে, ইউএফএসের গুলশানের অফিসে সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘কোম্পানিটির গেট ভেতর থেকে বন্ধ। প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির গইট বন্ধ। কোনো লোকজন আসে না। এক বৃদ্ধ লোক থাকতেন। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ  লাইন, গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই তিনিও এখন আসেন না।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’র মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং  এবং রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এফআরসিকে কবে চিঠি দেবে, সে ব্যাপারে কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আর নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির মূল অপরাধ সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সঠিকভাবে অডিট না করেই সার্টিফায়েড করেছে। এ থেকেই প্রতিয়মান হয় যে, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি কোম্পানিটির অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করেছে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন